রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সাথে দাম্ভিকতা প্রদর্শনের অভিযোগ।
লিয়াকত রাজশাহীঃ
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহা: মোকবুল হোসেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দম্ভোক্তি প্রদর্শন করেছেন। সাংবাদিকদের সাবধান করে দিয়ে তিনি বলেছেন, “আমার সম্পর্কে জানেন? আপনার যা খুশি ল্যাখেন। সাবধান করে দিলাম। সাংবাদিক হয়ে গেছে একেবারে। বিরাট একটা কিছু। ফালতু সব।” গতকাল মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা পৌনে তিনটার সময় এক পুলিশ কনস্টেবলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুঠোফোনে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় স্থানীয় এক সাংবাদিককে তিনি এসব কথা বলেন।
অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করায় প্রফেসর মোহা: মোকবুল হোসেন বলেন, “...এ ধরণের প্রশ্ন আমাকে ফারদার করবেন না। আপনি যেই হন না কেন। যেই হন, সাংবাদিক হন আর যেই হন না কেন। খবরদার এ ধরণের প্রশ্ন আমাকে করে ফোন করবেন না। সাবধান করে দিলাম।” তার এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে ওই সাংবাদিক বলেন, “অভিযোগ আসলে তো বক্তব্য লাগবেই স্যর।” এর জবাবে তিনি বলেন, “কিসের অভিযোগ? আপনি কে? কিসের অভিযোগ আপনার? ফালতু কথা বলেন। আপনি আমার সম্পর্কে জানেন? আপনার যা খুশি ল্যাখেন। সাংবাদিক হয়ে গেছে একেবারে। বিরাট একটা কিছু। ফালতু সব।” এরপর বাজে ভাষা ব্যবহার করে ফোন কেটে দেন তিনি।
সাংবাদিকদের সাথে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের এ ধরণের দম্ভোক্তি প্রদর্শনমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী প্রেসক্লাব। মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা এক যুক্ত বিবৃতিতে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, চেয়ারম্যানের বক্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ। সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা অনিয়ম-দুনর্ীতির সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এরপর থেকেই তিনি শিক্ষক, ছাত্র অভিভাবক ও সাংবাদিকের সাথে বাজে আচরণ করে চলেছেন। যা দুঃখজনক। অবিলম্বে তাকে বোর্ড চেয়ারম্যাননের পদ থেকে প্রত্যাহার করারও দাবি জানান প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।
এদিকে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড এবং বোর্ড অধীভূক্ত দুই কলেজের গড়িমসিতে ফলাফল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন মেহেদি হাসান রানা নামে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি ব্যাচের এক শিক্ষাথর্ী। সরকারিভাবে ‘অটোপাস’ দেয়া এ ব্যাচের শিক্ষাথর্ী মেহেদির ফরম পূরণের টাকাই জমা নেয়নি শিক্ষাবোর্ড। এছাড়া ফরম পূরণ করতে শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল হক উচ্চ পযার্য়ের ‘তদবির’ নিয়ে আসতে বলেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষাথর্ীর বাবা পুলিশ কনস্টেবল আবু সাইদ শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহা: মোকবুল হোসেনের কাছে লিখিত আবেদন নিয়ে গেলে সেটি জমা না নিয়ে নিজেকে ‘ডিআইজির সন্তান’ দাবি করে ওই পুলিশ কনস্টেবলকে ফিরিয়ে দেন তিনি।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি শিক্ষাথর্ী মেহেদি হাসান রানা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৪৪ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ হয়ে জয়পুরহাট সরকারি কলেজে ভর্তি হন। তবে তার বাবা পুলিশ কনস্টেবল আবু সাইদ বগুড়ায় বদলী হওয়ায় তিনি জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে টিসি নিয়ে বগুড়ার গাবতলী সরকারী কলেজে চলে যান। এখানে একবছর পড়ালেখাও করেন।
বিলম্ব ফরম পূরণের জন্য আবেদন করলে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড ওই আবেদন গ্রহণ করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ফরম পূরণের টাকা জমা না নিয়ে তাকে কলেজে পাঠায়। সূত্র জানায়, মেহেদি গাবতলী সরকারী কলেজে গেলে কলেজ অধ্যক্ষ কালক্ষেপণ করেন এবং পূর্বে ভর্তি হওয়া জয়পুরহাট সরকারী কলেজে যেতে বলেন। এছাড়া সেখানে গিয়েই ফরম পূরণের সমস্যা সমাধান করতে বলেন ওই অধ্যক্ষ। অথচ একবছর পূর্বেই জয়পুরহাট কলেজ থেকে তিনি টিসি নিয়ে গাবতলী সরকারী কলেজে চলে এসেছেন। তবুও জয়পুরহাট সরকারী কলেজে যান মেহেদি। স্বাভাবিকভাবেই টিসি নিয়ে নেয়ায় তার কোনো দায় দায়িত্ব নিতে চায় নি জয়পুরহাট কলেজ। ফলে আবারো গাবতলী কলেজে ফিরে এসে ফরম পূরণের জন্য অধ্যক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি। এরইমধ্যে ফরম পূরণের সময় শেষ হয়ে যায় এবং এ বছর আর পরীক্ষা দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে সামনের বছরের জন্য প্রস্ততি নিতে বলেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শামসুল আলম চৌধুরী। এদিকে মহামারী করোনা প্রাদুভার্বের ফলে ‘অটোপাশ’ দেয়ার ঘোষণা আসে সরকারের তরফ থেকে।
মেহেদির পিতা পুলিশ কনস্টেবল আবু সাইদ বলেন, “নিরুপায় হয়ে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে যোগাযোগ করি। সেখানে ফরম পূরণের ফি জমা নিতে উচ্চ পযার্য়ের ‘তদবির’ নিয়ে আসতে বলেন শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল হক। শিক্ষা সচিবের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করি। তবে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।”
আবু সাইদ জানান, সবশেষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানালে জেলা প্রশাসক তাকে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বলেন। পরে তিনি জেলা প্রশাসকের রেফারেন্সে লিখিতভাবে একটি আবেদন শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে গেলে চেয়ারম্যান নিজেকে ‘ডিআইজির সন্তান’ দাবি করে দরখাস্ত না নিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেন। সংশ্লিষ্টদের গড়িমসিতে তার ছেলে একবছর পিছিয়ে যেতে বসায় এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে বগুড়ার গাবতলী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শামসুল আলম চৌধুরী বলেন, “একটা কলেজে তো অনেক স্টুডেন্ট পড়ালেখা করে। কারো সাথে এরকম কোনো কিছু হয়েছে বলে আমার মনে পড়ছেনা।” রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল হক উচ্চ পযার্য়ের তদবিরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “এরকম কোনো কথা আমি বলিনি। কলেজ যদি গড়িমসি না করত তাহলে হয়ে যেত। এখন কিছুই করার নেই।