বড়াইগ্রামে কৃত্রিম সংকটে সারের দাম বৃদ্ধি, দিশেহারা সাধারণ কৃষক।
স্টাফ রিপোর্টার
নাটোরের বড়াইগ্রামে কৃষি অধিদপ্তরের দায়িত্বহীনতার সুযোগে কৃত্রিম সার সংকট তৈরি অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। দিশেহারা উপজেলার সাধারণ কৃষক,কৃষকরা জানান নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বড়াইগ্রাম উপজেলার সার ডিলাররা পার্শ্ববর্তী উপজেলায় ব্যবসায়ীদের কাছে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করে যাচ্ছে, যার কারণে বড়াইগ্রাম উপজেলা সার সংকটের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষকদের অভিযোগ,বড়াইগ্রাম উপজেলায় সাদা সোনা খ্যাত রসুন ব্যপক পরিমাণ উৎপাদন হয়। এই রসুন চাষ মৌসুমে সারের ব্যাপক চাহিদার বিষয়টিকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন ডিলারসহ সার ব্যবসায়ীরা। গুদামে পর্যাপ্ত সার রেখে সংকটের মিথ্যা গল্প সাজিয়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৭০-৯০ শতাংশেরও বেশি দামে পার্শ্ববর্তী লালপুর, গুরুদাসপুর, বাগাতিপাড়া, চাটমোহর উপজেলায় সার বিক্রি করছেন ডিলাররা। উত্তরাঞ্চলে দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটি রসুন চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় এ উপজেলায় বরাবরই সর্বাধিক জমিতে রসুন চাষ হয় থাকে।এরমধ্যে সিন্ডিকেট করে সারের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধিতে কৃষকদের জন্য এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ।বড়াইগ্রাম উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভায় রাসায়নিক সারের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু কিছু সার ব্যবসায়ী। সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। উপজেলার রবি মৌসুমের চাষিরা সার কিনতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। বিগত বছরগুলোতে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করা হলেও এই বছর লাগামহীনভাবে অতিরিক্ত সারের বাড়িয়েছে ডিলাররা,ফলে ভরা রবি মৌসুমে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষকরা আক্ষেপ করে বলেন, খোলাবাজারে সারের লাগামহীন দাম বাড়ায় আমরা জানিয়েছি, তারপরও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বিক্রয়ের রশিদ ছাড়াই ইচ্ছেমতো সারের দাম নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।কিছু ব্যবসায়ী সার সঙ্কটের অজুহাত দিয়ে সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক হারে বিভিন্ন ধরনের সার বিক্রি করছে উপজেলার ধানাইদহ, রাজাপুর, আহমেদপুর, বনপাড়া, বড়াইগ্রাম, জোনাইল সহ ছোট ছোট কীটনাশকের দোকানে সরকার নির্ধারিত মূল্যের তোয়াক্কা না করে প্রায় দ্বিগুন দামে বিক্রি করছে সার। ইউরিয়া (৫০)কেজির প্রতি বস্তা সরকারিভাবে ১৩৫০ টাকা করে বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৪০০- ২১৫০টাকায়। টিএসপি বিক্রি করার কথা ১৩৫০ টাকায় কিন্তু বিক্রি করছে ২০০০ - ২৫০০ টাকায়, পটাশিয়াম ১০০০টাকায় বিক্রি করার কথা কিন্তু ১১০০-১২০০টাকা এবং ডি এ পি বিক্রি করার কথা ১০৫০ টাকা কিন্তু বিক্রি করছে ২০০০ -২১৫০ টাকায়। বড়াইগ্রাম উপজেলায় সরকারিভাবে সার বিক্রি করার জন্য বিসিআই সির ডিলার ১১ জন এবং বিএডিসির ডিলার রয়েছে ১১ জন। এসব ডিলার সরকারিভাবে তাদের বরাদ্দকৃত সার পেলেও তারা খুচরা পাইকারি কার্ডধারীদের যে পরিমাণ সার তাদের জন্য বরাদ্দকৃত সে পরিমাণ সার তাদের না দিয়ে কৃষকের কাছে সরকারি দামে সার বিক্রি করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দ্বিগুণ বেশি দামে সার বিক্রি করার কৌশল হিসেবে গ্রহিতাকে রশিদ দেননা ব্যবসায়ীরা। বেশির ভাগ সারের দোকানে কোনো মূল্য তালিকাও টানানো নেই। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, এমন কৃত্রিম সংকট আর সৃষ্ট সিন্ডিকেট চলতে থাকলে এদেশের কৃষি খাত ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগবে না।বড়াইগ্রাম উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের কৃষক মজিদ জানান,সারের দোকানে সার নিতে গেলেই বলে নাই, তারা অন্যত্র সার বিক্রি করে দেয় বেশি দামে এতে বড়াইগ্রামের কৃষক সরকারি নির্ধারিত ন্যায্য মূল্য থেকে সার ক্রয় করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বি সি আইসি ডিলার আকবর আলী কাছে সার সিন্ডিকেট-অতিরিক্ত দামে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের মন্তব্য করতে চাইনি ।এ বিষয়ে খুচরা পাইকারি কার্ডধারীদের সভাপতি মোঃ আকরাম হোসেন জানান বিসিআই সি, এবং বিএডিসির ডিলারদের কাছ আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত যে পরিমাণ সার পাওয়ার কথা সেই পরিমাণ সার আমরা পাইনা, সেই সার আমাদের না দিয়ে তাঁরা নিজেরাই কৃষকদর কাছে বিক্রি করেন, তিনি আরো জানান বড়াইগ্রাম উপজেলায় খুচরা পাইকারি কার্ডধারী ৬১জন থাকার কথা কিন্তু সেই জায়গায় এখন বর্তমানে ৫০ জন খুচরা পাইকারি কার্ডধারী রয়েছে, এই ১১জনের বরাদ্দকৃত কমিশনের সার বিসিআই সি, ডিলাররা নিজেরাই রেখে দেন । এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহদি হাসান জানান, উপজেলার সার ডিলারদের অন্য উপজেলা সার বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে তারপরে যদি বিক্রি করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে সার বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে এবং সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে, সার নিয়ে কোন অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না,অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।