কয়রায় জামায়াতে ইসলামীর ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

 প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৫, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ


খুলনার কয়রা উপজেলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কয়রা উপজেলার উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ পবিত্র ঈদ আযহা উপলক্ষ্যে রবিবার (৮ জুন) বিকেলে কয়রা জামায়াতে ইসলামীর নিজস্ব কার্যালয়ে এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। 

কয়রা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক এবং খুলনা-০৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের এমপি প্রার্থী আলহাজ্ব মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। 

প্রধান অতিথি আলহাজ্ব মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সবাইকে পবিত্র ঈদ আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ অবধি ৪ বার নিষিদ্ধ হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট সংগঠনকে নিষিদ্ধের প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বৈরচারী হাসিনা সরকারের আমলে জামায়াতে ইসলামীর ৫ জন নেতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে এবং ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসনে জয়লাভ করে। ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান থেকে আমাদের অঙ্গীকার হোক- সৎ কাজে পারস্পরিক সহায়তা করে তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে পারস্পরিক সহায়তা করা। ইসলামী আন্দোলনে জীবন উৎসর্গের মানসিকতা সৃষ্টির আগে আমাদেরকে ব্যক্তি জীবনে যথাযথ লেনদেন, তাকওয়াপূর্ণ জীবন গঠন করতে হবে। আমাদের মধ্যকার ভুলত্রুটি শুধরে নিতে হবে এবং প্রতিশোধ পরায়ণ হতে বিরত থেকে ইসলামকে বাংলার জমিনে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় যাবো না। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতায় নিয়ে যাবো। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যে যেখানে রয়েছেন, সেখান থেকে বাংলার জমিনে কুরআনের সমাজ কায়েম করতে আপনাদের সহায়তা, অর্থ, শ্রম, মেধা দিয়ে কাজ করুন। 

বক্তব্যে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব দুই হাত তুলে ১০টি আসন জয়লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন এবং সেই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসনে প্রথম নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেন। আজ বাংলার জমিনে জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্যে কাজ করার সুযোগ এসেছে। সাড়ে ৪ কোটি লোক কোনো না কোনোভাবে জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্যাতনে আমাদের ৩০ হাজার ভাই আহত হয়ে আছে, ৫ হাজার ভাই পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, হাজার হাজার ভাই নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার ভাই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু মজলুমের দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। আল্লাহ মজলুমের চোখের পানি ও রক্ত কবুল করেছেন। বাংলার জমিন থেকে স্বৈরাচারী সরকারের নিপাত হয়েছে। এখন ইসলামী আন্দোলনকে বেগবান করতে সংগঠনকে সুশৃঙ্খলকেভাবে পরিচালনা করতে হবে, দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করতে হবে, সংগঠনের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। 

এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান, খুলনা জেলা দক্ষিণ ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এ্যাড. শাহ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. বেলাল হোসাইন, গাজীপুর মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মাছুম বিল্লাহ, ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য ও কয়রা পাইকগাছা উন্নয়ন ফোরামের আহবায়ক মো: আব্দুর রশিদ, ড. ডি এম শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুলনা জেলা দক্ষিণ সভাপতি আবুজার গিফারী প্রমুখ। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাশরের ময়দানে কেউ কাউকে চিনবে না। সকলে আল্লাহর সাহায্য কামনা করবে। তখন ৭ প্রকার মানুষকে আল্লাহ আরশের ছায়া তলে আশ্রয় দেবেন। তার মধ্যে এক শ্রেণির মানুষ- যারা ইসলামের সাথে একত্রিত থেকে মিলিত হয়। আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আটকে ধরেন এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় না। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ পাবে। আমাদের প্রত্যেককে প্রত্যেকের পাশে দাঁড়াতে হবে, সহায়তা করতে হবে। আমাদের ভালোবাসা হবে অকৃত্রিম, আমাদের সম্পর্ক হবে দৃঢ়। আমাদের ভিন্ন মতাদর্শের মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে তাদেরকে ইসলামের পতাকা তলে আবদ্ধ করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থীকে নিরঙ্কুশ ভোটে জয়লাভ করতে সকলে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করতে হবে। 

ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা-৬ আসনের একজন দ্বীনি মজলুম মানুষ হিসেবে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ জাতীয় সংসদের এমপি প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন। কয়রা-পাইকগাছা অঞ্চল ইসলামের ঘাটি। আমরা সবাই মিলে এই ঐক্যকে ধরে রাখবো এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থীকে বিজয় করতে সবাই সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। মুনিনের সাথে মুমিনদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমি আমার ভাইয়ের জন্য যে দোয়া করি, ফেরেশতারা ওই ব্যক্তির জন্য একই দোয়া করেন। আমরা দ্বীনি ভাইদের সাথে শিশা ঢালা প্রাচীরের মতো দৃঢ়ভাবে একত্রিতভাবে কাজ করবো। 

ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম সহ সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীলবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কয়রা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের আমীর, কয়রা উপজেলার সাবেক ও বর্তমান অসংখ্য নেতাকর্মী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ সহ অর্ধ-সহস্রাধিক লোকজন।

সারাদেশ এর আরও খবর: