ডিবি পুলিশ অভিযানে লটারি স্বপ্নে সর্বস্বান্ত প্রবাসী, ফেসবুক প্রতারণায় ধরা পড়ল প্রতারক রনি

 প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ০১:০৫ অপরাহ্ন   |   অপরাধ ও আইন


মনা নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

সৌদি প্রবাসী মোঃ সুজন ইসলামের দিনগুলো কাটছিল একঘেয়ে কাজ আর ঘরের মানুষের স্মৃতিতে ভেসে। ঠিক এমনই এক সন্ধ্যায় ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি অচেনা নাম থেকে আসা বার্তাটি যেন হঠাৎ করে তার মনকে নাড়া দিল। কথোপকথন শুরু হলো খুব সাধারণভাবে—কেমন আছেন, কোথায় থাকেন, কতদিন হল বিদেশে—এরকম খোশগল্পে। ধীরে ধীরে সম্পর্কটা যেন একটু গভীর হতে লাগল। অপর প্রান্ত থেকে আসা কথাগুলো ছিল চটুল, আকর্ষণীয়, আর সবচেয়ে বড় কথা—বিশ্বাসযোগ্য।


একদিন সেই অপরিচিত বন্ধুটি আচমকাই এক খবর শোনাল, যেটা শুনে সুজনের মাথা ঘুরে গেল—“ভাই, থাইল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল লটারিতে আপনার নাম উঠেছে! প্রথম পুরস্কার ৮৪ লাখ টাকা!”


প্রথমে একটু সংশয় জাগলেও, ধাপে ধাপে এমন সব কাগজপত্র ও কথাবার্তা দেখানো হলো যে সুজনের সন্দেহগুলো  উবে গেল। বলা হলো, পুরস্কার নিতে হলে আগে সরকারের ভ্যাট বাবদ ১০ লাখ টাকা পাঠাতে হবে—এই শর্তটাই নাকি ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম’।


দেশে থাকা শ্বশুরকে ফোন করে সব খুলে বলল সুজন। তাঁকে বুঝিয়ে বলল, "দেখেন, এবার বুঝি আমাদের ভাগ্য ফিরছে। এই টাকাটা দিলেই আমরা লাখপতি!" সেই বিশ্বাস থেকেই ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে দড়াটানা এলাকার বিভিন্ন বিকাশ দোকান ঘুরে ঘুরে প্রতারকদের দেওয়া মোবাইল নম্বরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা।


কিন্তু টাকা পাঠানোর পর যেন হাওয়া হয়ে গেল অপর প্রান্তের মানুষটি। ফোন বন্ধ, মেসেজে ‘Seen’ না, আর কোনো উত্তর নেই। তখনই বাস্তবের নির্মম সত্যটা সুজনের চোখে ধরা দিল—সে প্রতারণার শিকার হয়েছে।


প্রতারণার এই কাহিনির  রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশ—ডিবি।


চুপিসারে, নিঃশব্দে কাজ শুরু করে ডিবির একটি বিশেষ টিম। শত কৌশল আর প্রযুক্তির সহায়তায় ধাপে ধাপে এগোতে থাকে রহস্য উদঘাটনের পথে। হঠাৎ এক সন্ধ্যায়—হ্যাঁ, গতকাল ১৪ জুন—তাদের কাছে আসে এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। অবশেষে মিলল সেই বহু প্রতীক্ষিত সন্ধান!


নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার পানিয়ার পুকুর এলাকার এক ছোট্ট বাড়ি—সেখানেই আত্মগোপনে ছিল প্রতারক রনি ইসলাম (২২)। চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ডিবি। মুহূর্তেই তাকে গ্রেফতার করা হয় নিজের বাড়ি থেকেই।


ডিবির কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনি অকপটে স্বীকার করে ফেলে নিজের কৃতকর্ম। জানা যায়, এই তরুণই ছিল ফেসবুক প্রতারণার পুরো পরিকল্পনার মূল হোতা। তার হেফাজত থেকে উদ্ধার হয় প্রতারণায় ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন।


রনি ইসলাম, মহুবার রহমানের ছেলে—কিশোরগঞ্জ থানার পানিয়ার গ্রামের বাসিন্দা। তাকে আজ আদালতে সোপর্দ করেছে ডিবি পুলিশ।

অপরাধ ও আইন এর আরও খবর: