যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় বুদ্ধি শিশু প্রতিবন্ধী বাদাম বেঁচে সংসার চালাই।

 প্রকাশ: ৩০ অগাস্ট ২০২২, ০২:৩৫ অপরাহ্ন   |   জেলার খবর


আব্দুল জব্বার, যশোর জেলা ব‍্যুরো প্রধানঃ

 যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কুয়াদা স্কুল এন্ড কলেজের ছেলে-মেয়েরা সবাই ক্লাসে বসে শিক্ষকদের পাঠদান মনোযোগ সহকারে শুনছে। ঠিক এমন সময়ে বাতাসের সাথে ভেসে আসছে শিশু জুবায়ারের হাক-ডাক, বাদাম লাগবে ভাই বাদাম, নেন না ভাই বাদাম, সময়ের ঘড়িতে সকাল সাড়ে দশটা। তবে সবাই যেন শুনেও শুনছেন না তার কথা। এভাবেই হাক ডাক দিয়েই দিন শুরু হয় ১২ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশু জুবায়ের আল-মাহমুদের। প্রতিবেদকের সাথে এক দুই কথায় শিশু জুবায়ের তার সংগ্রামী জীবনের গল্প বর্ণনা করে।


বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু জুবায়েরের বাবার পাষবিক অত্যাচারের কারণে বর্তমানে ঠাই হয়েছে সদর উপজেলার সিরাজসিংঙ্গা গ্রামে তার নানীবাড়ির একটি জরাজীর্ণ কুঠিরে। সেখানেই এক বছরের ছোট্ট একটা বোনসহ দুই বোন, দুই ভাই আর মা রহিমা বেগমকে নিয়ে তার বসবাস। নিজে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হলেও বর্তমান শিক্ষিত সমাজে নিরক্ষর হয়ে থাকা তার মোটেও ইচ্ছে নয়। তাই তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে ডহরসিংঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তবে অভাবের কারণে সেই প্রাথমিকের গন্ডিটাও পেরোতে পারেনি শিশু জুবায়ের। কিছুটা বুঝতে শেখার পর মায়ের অভাবের সংসারে দুঃখ লাঘব করার জন্য সে স্কুল ব্যাগ ছেড়ে হাতে তুলে নিয়েছে বাদামের গামলা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে উড়ন্ত বয়সে দুরন্তের সময় শিশু জুবায়ার কে হতে হয়েছে ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা।


শিশু জুবায়েরের মা অসুস্থ থাকায় কাজ করতে পারেন না। প্রতিদিন ভোরে ২-৩ কেজি বাদাম বাড়ি থেকে তার মা ভেজে দিলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেটা বেচে যা লাভ হয় তা দিয়ে মাছ জোটে না, কোনো মতে তরকারী আর ডাল, চাল কিনে নিয়ে বাসায় ফিরতে হয়।


চোখ মুছতে মুছতে জুবায়ের বলে, আমি রাতে কোনোদিন খাইনে রাতি খালি আমাগের সবার খাওয়া হয় না। তাই মাঝে মাঝে যে অল্পদুটো ভাত থাকে তাই সকালে পান্তা ভাত আর ঝাল পিঁয়াজ দিয়ে মাখে খাইয়ে বাদাম নিয়ে বেরোই পড়ি। গেলো কুরবানি ঈদের দিনও শাক দিয়ে ভাত খাইছি। তাও আশপাশের বাড়ি থেকে অল্প এট্টু গোস্ত কুড়িয়ে এনে রাত্রি মা রান্না করিলো তাই খাইলাম।


জুবায়েরের মায়ের পেটে যখন ছোট বোন তখন তার বাবা তাদের ফেলে রেখে চলে যায়। জুবায়ের বাবা বিয়ে করে নড়াইলের ছাতিমতলার চাতালে কাজ করেন। সে ঘরেও তার একটা মেয়ে হয়েছে।


সরেজমিনে জুবায়ারের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, জড়াজীর্ণ একটি টিনের ঘরের তাদের বসবাস। যেনো একটু জোরে ঝড় হলেই উল্টে যাবে। এই ঘরেই চার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন মা রহিমা বেগমে। কথা হয় তার সাথে।


তিনি বলেন, আমরা খুবই অসহায়। আমাদের সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা দেয় না। আমার এবং আমার প্রতিবন্ধী ছেলের কোনো কার্ড নেই। আগে আমার ছেলে প্রতিবন্ধী জুবায়ের অন্যের দোকানে কাজ করতো, তাতে প্রতিদিন ৩০-৪০টাকা করে দিত। কিন্তুু বাদসাধে জুবায়ের অজ্ঞান হয়ে যায় (ফিটের রোগ)। জুবায়েরের বয়স যখন ৩ মাস তখন থেকে ঐ রোগ, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। তাই দোকানে আর কাজে পাঠাইনা। কিছুদিন যাবৎ বাদাম বিক্রি করছে। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি আরো বলেন, জুবায়েরের বাদাম বেচাঁ টাকা দিয়েই এক আধবেলা খেয়ে না খেয়ে আমাদের সংসার চলছে।


রামনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে জুবায়েরকে মাঝে মধ্যে সাহায্য সহযোগিতা করি। আর শিশু জুবায়ারকে প্রতিবন্ধী কার্ড করাসহ ওদের পরিবারের সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।


এ ব্যাপারে যশোর জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইতি সেন বলেন, এখন অনলাইন জরিপ চলছে। প্রতিবন্ধী ওই শিশুকে সমাজ সেবা অফিসে পাঠালে তাকে একটা প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেয়া যেতে পারে। আর শিশুটির মা যেহেতু স্বামী পরিত্যাক্ত, আর বয়স যেহেতু ৬০ হয়নি এবং নিজস্ব কোনো জায়গা জমি নেই সেহেতু চেষ্ট করবো এ দরিদ্র পরিবারের জন্য কিছু করতে পারি কিনা।

জেলার খবর এর আরও খবর: