কালকিনিতে ১০বছর বিনা বেতনে চাকরি, এমপিওর পর চাকরি হারালেন শিক্ষীকা

 প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৩, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন   |   শিক্ষা


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শেখ লিয়াকত আহমেদ 

"আকলিমা জাহান" মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার খাসেরহাট সৈয়দ আবুল হোসেন স্কুল এন্ড কলেজের জীববিজ্ঞানের প্রভাষক।

২০১০ সালের প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১৩ সালে কমিটির মাধ্যমে জীববিজ্ঞান প্রভাষক পদে যোগদান করেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর যাবত সরকারি-বেসরকারি কোনো বেতনই পেতেন না এই শিক্ষিকা। এতে স্বামী সন্তান নিয়ে এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। এক সময় কলেজটি এমপিও ভূক্ত হবে এই আশায় বিনা বেতনে শিক্ষাগতা করেছেন এই শিক্ষিকা।

অথচ ২০২২ সালে এমপিও ভুক্ত হওয়ার পর তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ কলেজের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। তাদের স্বেচ্ছাচারিকা ও জুলুম করে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন ঐ শিক্ষিকা ।

বুধবার (৭জুন) রাতে তার নিজ বাড়ীতে সংবাদ সম্মেলন তিনি এ তথ্য জানান, এসময় তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালে জীববিজ্ঞান প্রভাষক পদে যোগদান দীর্ঘ দশটা বছর বিনা বেতনে চাকরি করেছি। শুধুমাত্র এই আশায় একদিন এই কলেজটি এমপিও ভুক্ত হবে।  

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ২০২২ সালে এমপিএ ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে আমাকে এমপিও ভূক্ত না করার জন্য নানা তালবাহানা করতে থাকেন তারা। আমি কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে বারবার ধন্না দিলেও কোন কাজ হয়নি। বরং এমপিও ভূক্ত করার জন্য তারা ২ লক্ষ টাকা দাবি করে। উপায়ন্ত না পেয়ে তাদের নগদ ও চেকের মাধ্যমে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নতুন অন্য শিক্ষকের কাছ থেকে বেশি আর্থিক সুবিধা ভোগ করার জন্য কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে  কলেজের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও শ্রেণী কার্যক্রমে অংশগ্রহণে বাঁধা প্রদান করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানের কমিটিরা শিক্ষকদের নামের তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দিয়ে ফরোয়ার্ডিং ডিও অফিসে পাঠান। আমি দীর্ঘদিন তাদের কাছে ধন্না দিয়ে পায়নি কোন সমাধান। এরপরে বিষয়টি তৎকালীন সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা মহোদয়কে অবগত করলে মহোদয়গণ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে এহেন আচরণ পরিহার করে আমাকে প্রতিষ্ঠানে যথাযথ কার্যক্রমে অংশগ্রহনের সুযোগ দেবার নির্দেশ দেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তা না করে নানান বাহানায় প্রতিষ্ঠানে আমি গেলে শ্রেনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণে বাঁধা প্রদান সহ হাজিরা খাতা আলমিরাতে আটকে রাখেন।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া চক্রান্তের অংশ হিসেবে দীর্ঘ দিন থেকে শিক্ষকতা করা আমাকে বিনা নোটিশে মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। চাকরি হারিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি আমি যেন আমার চাকরিটা ফেরত পেতে পারি তাহলে আমি আমার পরিবারকে নিয়ে বাঁচতে পারবো। আর তা না হলে আমার আর বাঁচার মতো কোন সম্বল থাকবে না।

খাসেরহাট সৈয়দ আবুল হোসেন স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ  মনি শাজাহান বলেন, তার কাছে থেকে কোন টাকা পয়সা নেওয়ার হয়নি। সে আমাদের এখানে কয়েদিন চাকরি করার পরে শিবচরে স্কুলে যোগদান করেছিল।সেখান থেকে সে বেতন তুলতো। যখন এই প্রতিষ্ঠানটি এমপিএ ঘোষণা হয়। তখন সে সেই স্কুলে ছেড়ে চলে আসে আমাদের স্কুলে। সরকারি নিয়ম আছে প্রতিষ্ঠান থেকে চলে গেলে পরে আসলে তাকে আর এখানে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম নেই। তাকে বার বার আসতে বলা হয়েছিল কিন্তু সে আসে নাই। এখন আমাদের কিছুই করার নেই।

খাসেরহাট সৈয়দ আবুল হোসেন স্কুল এন্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিক্ষিকা আকলিমা জাহানের বিষয়ে বিধিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম চলোমান রয়েছে। আর অর্থনৈতিক লেনদেনের সাথে আমি জড়িত নই, আমাকে নিয়ে যে অভিযোগ জানিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এর প্রতিবাদ জানান তিনি।

এ বিষয়ে কালকিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জমান বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি তাই এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে নিয়োগ বাণিজ্যসহ যেসব অনিয়মের কথা এসেছে তা নিয়ে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ জানায় তা খতিয়ে দেখা হবে।

শিক্ষা এর আরও খবর: