মুকসুদপুর প্রাণী সম্পদ হাসপাতালের বেহাল দশা।

 প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:১১ অপরাহ্ন   |   মুকসুদপুর


 গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

 গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রাণীসম্পদ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই উপজেলায়।


ঐ উপজেলায় প্রায় ৮২৩৫০ গরু, ২৬৯২০ ছাগল, ১৬৮২১০টি হাস,  ১২৫০০০ মুরগী,  ৪২০০০ কবুতর। প্রয়োজনীয় উপকরণ, ওষুধ ও জনবল সংকটের কারণে দিন দিন স্থবির হয়ে পড়ছে সরকারি এই প্রাণী সম্পদ অফিসটি। ১১টি পদের মধ্যে ৫টি পদই রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।



 

দীর্ঘদিন ধরে ভেটিরিনারী সার্জন ছাড়াই চলছে এই সরকারী হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম। এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ভবন আছে তাও রয়েছে জরাজির্ন এলাকায় পর্যাপ্ত গবাদিপশু আছে, নেই শুধু সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, তাই জনগণ ছুটছে বেসরকারি হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে।


প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৬ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে মুকসুদপুর উপজেলা গঠিত। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের তথ্যমতে তালিকাভুক্ত গরুর খামার রয়েছে ৩৬টি। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আরো ছোট-বড় প্রায় ৩২টি খামার রয়েছে। ছাগলের খামার ৪টি, হাঁসর খামার ২ ও লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৫টি নন রেজিস্টার ১৫০টি।



 

তবে গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় ৮২৩৫০টি। বর্তমান সরকার যখন দেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করতে বিভিন্ন উপায়ে যেমন, ছাগল পালন, হাঁস- মুরগীর খামার, গবাদী পশু পালনে মানুষদের আগ্রহী করছেন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে সরকারি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের অসচেতনা ও অবহেলায় যেমন আগ্রহ হারাতে বসেছে পশু পালনকারীরা, তেমনি নষ্ট হচ্ছে প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটির সরঞ্জামাদিও ।


যে কারণে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে উপজেলার এই প্রাণী সম্পদ হাসপাতালটির কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির ১১টি পদের মধ্যে ৫টি পদই দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য। এছাড়া ৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি দিয়ে চলছে অফিসের কার্যক্রম।


উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, উপসহকারি প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা, উপসহকারি প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারন),  এফএএআই, ভিএফএ, অফিস সহায়কের মাধ্যমে সরকারি এই হাসপাতালটির কার্যক্রম চলছে। আর অন্যান্য ৫টি পদ ৬বছর ধরে শূন্য রয়েছে। এই পদগুলো শুন্য থাকায় গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবা নিয়ে উপজেলাবাসী পড়েছে নানা বিপাকে।


জানা যায়, এখানে এক সময় প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন বিভিন্ন সেবা যেমন কৃত্তিম প্রজনন, ছাগলের ঠাণ্ডা কাশিসহ ভ্যাক্সিন দিতে আসতো। বর্তমানে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে খামারিদের।


এছাড়াও ৩জন কর্মকর্তা কর্মরত থাকা অবস্থায়ও খামারিরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। নির্ধারিত সময়ে অফিসে না আসার অভিযোগও উঠেছে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সরকারি সেবার এই দৈন্যদশার সুযোগে পশু ডাক্তারের নামে হাতুড়ে ডাক্তারের ছড়াছড়ি। আর এদের হাতে গলাকাটা সেবার শিকার হচ্ছে সাধারন মানুষ।


এক সময় এই হাসপাতালটি হতে সপ্তাহে একদিন বিনা মূল্যে হাঁস মুরগী ভ্যাকসিন প্রদান করা হতো। বর্তমানে সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। কারণ বর্তমানে বাজারে হাজারের নীচে ২০/২৫ টি হাঁস মুরগীর কোন ভ্যাকসিন পাওয়া যায় না। আর সাধারণ মানুষের পক্ষে এত দামের ভ্যাকসিনও কেনা সম্ভব হয় না।


মুকসুদপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায় ভিন্ন চিত্র। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক খামারী অভিযোগ করে বলেন সরকারি পশু হাসপাতাল থেকে আমরা কোন সেবা পাইনা। দুপুরের পরে প্রায়ই অফিস বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে আমাদের খামারের হাস মুরগির চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।


এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছেনা। প্রত্যেক মাসিক সভায় এই বিষয়টি উত্থাপন করি এবং লিখিত আবেদন করি কিন্তু কোন ফল আসে না।


উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বলেন লোক নেই কোথা থেকে দেব, যেভাবে চলে সেভাবে চালাতে হবে। তিনি আরো বলেন মুকসুদপুর উপজেলায় ১২ বছর কর্মরত আছি তবে পূর্বের তুলনায় এখন হাসপাতালে গবাদি পশুর চিকিৎসা সেবা নিতে আসার সংখ্যা কমে গেছে।

মুকসুদপুর এর আরও খবর: