বিশ্বজয় থেকে ডোপ টেস্টের আসামি।

 প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন   |   খেলাধুলা


বার্তা সম্পাদক 

আউয়াল ফকির


পল পগবার জীবন নিয়ে কোনো সিনেমা তৈরি হলে তিনি নিজেই হবেন সেটার ভিলেন। কেননা একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই ধ্বংস করেছেন নিজের ক্যারিয়ার। 


ক্যারিয়ারের শুরুতেই পগবার মধ্যে দেখা গিয়েছিল বিশ্বসেরা হওয়ার সকল বৈশিষ্ট। সবার ধারণা ছিল বিশ্বসেরাদের কাতারে নিজের জায়গা তৈরি করে ফেলবে এই ফ্রেঞ্চ বিস্ময়বালক।


পগবা তার সমবয়সিদের তুলনায় অনেক ম্যাচিউরড ছিলেন। ফিজিকাল পাওয়ার, ড্রিবলিং, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিভা তার মধ্যে ছোট বয়স থেকেই ছিল। তাই বয়সভিত্তিক দলে বেশিদিন খেলতে হয়নি তার। মাত্র ১৮ বছর বয়সে মেইন টিমে অভিষেক হয়ে যায় তার।


২০১১-১২ সিজনে পগবার অভিষেক হয়েছিল বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তির হাত ধরে। স্যার আলেক্স ফার্গুসনের অধীনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তখন ইউরোপের সেরা দলগুলোর একটা। তাদের মিডফিল্ড এ তখন স্কোলস, এন্ডারসন, ক্যারিকরা থিতু। এমন দলে স্বভাবতই সুযোগ পাওয়া কঠিন। 


পগবাও পাননি খুব বেশি সুযোগ। তাই দেরি না করে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইতালিতে। জুভেন্টাসে যোগ দেন ফ্রি এজেন্ট হিসেবে। এইখানে নিজের সেরা সময় পার করেছেন তিনি। জুভেন্টাসের হয়ে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন তিনি। 


গতি, ড্রিবলিং, লং শুটিং, ডিফেন্স ব্রেকিং পাস দিয়ে তিনি সেরিআ তে রাজত্ব চালিয়েছেন। এর সাথে একাধিক পজিশনে খেলার ক্ষমতা তাকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য এক উচ্চতায়।


এরই মাঝে ২০১৬ সালের ইউরোর রানারআপ হয় ফ্রান্স। তাদের সেই ক্যাম্পেইনেও পগবা নজর কেড়েছেন সকলেরই। কিন্তু শেষপর্যন্ত পর্তুগালের বিপক্ষে ফাইনালে হেরে যায় তার দল।


২০১৬-১৭ মৌসুমের শুরুতেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফিরিয়ে আনে তাদের ঘরের ছেলেকে। কিন্তু ঘর ছাড়ার সময় ফ্রিতে গেলেও ঘরে ফেরানোর সময় ইউনাইটেডকে ভাঙ্গতে সর্ব্বোচ্চ ট্রান্সফার ফি এর রেকর্ড। বেল কে সরিয়ে পগবা হয়ে যান বিশ্বের সবথেকে দামী ফুটবলার। 


কিন্তু, তার পিছনে ঢালা এই বিপুল পরিমাণ অর্থ উশুল করতে পারেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। মাঠের বাহিরে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের পাশাপাশি ড্রেসিংরুমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করেন পগবা। মোরিনহো তাকে সরাসরি ভাইরাস বলে সম্মোধন করেন। পগবার সাথে বনবিনা না হওয়ার ফলে ইউনাইটেডের অদূরদর্শী বোর্ড তাকে রেখে মোরিনহোকে বরখাস্ত করে। 


২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া ফিফা বিশ্বকাপ জিতে ফ্রান্স। এই মহাবিজয়ের জন্য পগবা-কান্তের জুটি অনেক বাহবা পায়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিজের ২য় অধ্যায়ে পগবা ফ্রান্সের জন্য যতটা ডেডিকেটেড ছিলেন, ক্লাবের জন্য ততটা ছিলেন না। কিন্তু, তাও ইউনাইটেডের অযোগ্য বোর্ডের চোখে পগবা ছিল নির্দোষ। 


এরপর কখনোই পগবা শুধরায়নি। নানান অযুহাত, ইঞ্জুরি ও আলসেমি করে বছরের পর বছর বসে বসে মোটা অংকের বেতন গুনতেন। প্রতি ট্রান্সফার উইন্ডোর আগে দল ছাড়ার নাটক করে নতুন চুক্তি করতেন ইউনাইটেডের নির্বোধ ম্যানেজমেন্টের সাথে। 


অবশেষে ২০২২-২৩ মৌসুমে ইউনাইটেড ছেড়ে আবারও ফ্রি এজেন্ট হিসেবে যোগ দেন জুভেন্টাসে। কিন্তু বেপরোয়া জীবনযাপনের জন্য কখনোই আগের রূপে ফিরতে পারেননি তিনি। 


এর মাঝে কালোজাদু করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। তার ভাইয়ের ভাষ্যমতে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ড এ নাকি হায়েনা পুতে রেখেছেন পল পগবা। তার ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ধাক্কা আসে গত বছরের শেষাংশে। ডোপিং এর অভিযোগে ৪ বছরের জন্য সব ধরনের ফুটবল থেকে তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।


ক্যারিয়ারের শুরুটা যেমন হয়েছিল পগবার, শেষটা তার পুরো বিপরীত। বিশ্বসেরাদের সাথে ড্রেসিরুম শেয়ার করে শুরু, মাঝে প্রায় সব জিতেছেন। হয়েছেন বিশ্বজয়ী। আক্ষেপ থেকে গেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরো না জেতার। কিন্তু, ক্যারিয়ারের শেষটা একদম দুঃস্বপ্নের মতো। 


কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছে তার জীবন। ধ্বংস করেছে তার ক্যারিয়ার। তবুও এর মাঝে যা করেছেন তা অনেকের জন্যই স্বপ্ন। আজকে ৩১ বছর পূর্ণ হলো এই ফরাসি মিডফিল্ডারের। 


শুভ জন্মদিন পল পগবা!

শুভ জন্মদিন পগবুম!


©Samin Yasir Tanim

খেলাধুলা এর আরও খবর: