টাকা ধার না পাওয়া মজনু সরকার হতে চান বড় শিল্পী

 প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২২, ১০:২৮ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ



২০১৫ সালের কথা, মজনু আলীর গান শুনে ভাল লাগে দোতারা বাদক তফিল বয়াতির। সাথে সাথে মজনু আলীর বাবার কাছে প্রস্তাব রাখে, তোমার সন্তানকে বাউল মজনু সরকার অথ্যাৎ বাউল শিল্পী বানাতে চাই। ঠিক তখন থেকেই বাবার মনের ভিতরে স্বপ্নের ছবি আঁকতে শুরু করে ছেলেকে বড় শিল্পী বানাবে। অনুমতি দেন ছেলেকে গান শিখাবার, গান শিখতে শুরু করলো। এ ভাবেই শুরু হয় বাউল মজনু সরকারের গানের জগতে পথ চলা।


বাউল মজনু সরকার নিম্ন পরিবারের সন্তান, বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের ধন্দহ পশ্চিম পাড়া গ্রামে। বাবা মুকুল আলী একজন কৃষক। মা রানি বেগম সবসময় বাড়ির কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন।


মজনু আলী ২০১৫ সালে বোয়ালীয়া পাড়া এমএস উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়েন। সখের বসে স্কুলের সাংস্কিতিক অনুষ্ঠানে গান করে প্রথম স্থান অধিকার লাভ করে। গানের ভঙ্গিমা ভাল লাগে দোতারা বাদক তফিল বয়াতির।

মজনু সরকারের প্রথম হাতে খরি তফিল বয়াতি। তার কাছে মাত্র ১৫ দিনে দোতারা শিখা সম্পূর্ণ করেন। ঠিক তখন প্রয়োজন হয় একটি দোতারার। বাবার কাছে আবদার, তার একটি দোতারা প্রয়োজন। বাবা বড় টেনশনে পড়লেন, দোতারা কি ভাবে ছেলেকে কিনে দিবে। বাবা যা ইনকাম করে তা দিন এনে দিন খেয়েই শেষ হয়ে যায়।

ঠিক তখনি বাবা প্রিয়জনদের কাছে টাকা ধার চাইলো, কিন্তু কারো কাছে ধার না পাওয়াই সুদের উপর টাকা নিয়ে বাউল মজনু সরকারকে কিনে দেন একটি দোতারা। পরে স্থানীয় একটি একাডেমি “আবজাল সংগীত একাডেমী”তে অস্তাদ শ্রী গনেস চন্দ্র দাস এর কাছে হারমনিয়াম শিখেন, এটাউ সে ১৫ দিনে সম্পূর্ণ নিজের আয়ত্ত্বের ভিতরে নিয়ে আসেন। শুরু করেন বিভিন্ন স্থানে স্ট্রেজ পারফামেন্স।


মজনু সরকার বর্তমান বাঘা শাহদৌলা সরকারী কলেজে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ালিখা করার পাশা পাশি উত্তর পঙ্গের চেষ্ট বাউল শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক বয়াতির কাছে পালা গান শিখছেন। আর এই গানের মাধ্যমে যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে বাউল মজনু সরকারের নিজ পড়ালিখার খরচসহ তার বাবাকে নানা দিক থেকে সাহায্য করছেন। মজনু সরকার বর্তমান হারমোনিয়াম, দোতারা, বেহালা,উইকেলেলে সহ নানা রকাম যন্ত্রাংশ বাজাতে পারেন।


মজনু সরকার বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। আমাকে অনেক কষ্ট করে আজ এ পর্যন্ত নিয়ে আসচ্ছে, বাবার স্বপ্ন আমি যেন অনেক বড় একজন শিল্পী হতে পারি। আপনারা সবাই দোয়া করবেন আমি যেন আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। আর কখনো যেন আমার জন্য আমার বাবাবে সুধের উপর টাকা ধার না নিতে হয়।


বাবা মুকুল আলী বলেন, আমার একটি মাত্র সন্তান আমি আমার সন্তানকে বড় মাপের শিল্পী হিসেবে দেখতে চাই। আর এই শিল্পী বানানোর জন্য যত কষ্ট করতে হয় সকল কষ্ট মেনে নিতে আমি রাজি। আমি বিশ্বাষ করি আমার ছেলে যদি কখনো কনো বড় সুযোগ পাই তাহলে অবশ্যই সবার পরিচিতি লাভ করবে।


মা রানী বেগম বলেন, আমার সন্তান অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করার পাশাপাশি গানকে ধরে রেখেছেন। বর্তমান সে তার নিজের খরচ সহ আমাদেরকেউ নানা রকম সাহায্য সহযোগীতা করেন। আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন, যেন আপনাদের প্রিয় একটি মানুষসহ বড় শিল্পী হতে পারে।


প্রতিবেদনে মোস্তাফিজুর রহমান, রাজশাহী প্রতিনিধি