পবিত্র ঈদ-উল-আযহার (কোরবানির) ঈদকে সামনে রেখে বেনাপোলে কামার দের কাজের ব্যস্ততা মুখে হাসি

 প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন   |   সারাদেশ


মনা যশোর প্রতিনিধিঃ

চারপাশে শুধু টুংটাং শব্দ যেন কোনো মহাযুদ্ধের দামামা চলছে যশোরে শার্শা উপজেলা বেনাপোল পৌরসভার, হাতে আছে তিন দিন পর পবিত্র ঈদ-উল-আযহার (কোরবানির) ঈদকে সামনে রেখে ছুরি, চাপাতি, দা, নারিকেল কোরানিসহ অন্যান্য দেশীয় লোহার জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কামারেরা। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে রাত দিন এক করে এসব হাতিয়ার তৈরিতে নির্ঘুম রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। জানা যায়, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুড়ির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে, কামারদের কাজের ব্যস্ততা এতোই বেড়ে যায় যে, তাদের যেন দম ফেলানোর সময় থাকে না।খাবার দাবারেও সময় পাচ্ছেন না তারা। স্থানীয় কর্মকার শ্রী দিলীপ কুমার সাহাসহ অনেকেই জানান,বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কোরবানী ঈদে তাদের আয় রোজগারও হয় বেশি। প্রতিটি উন্নত মানের ধারালো দা বিক্রয় হয় ২৫০-৪০০টাকা, কোরবানীর ছুড়ি ৪৫০-৭০০ টাকা, পশুর হাড় কাটার জন্য চাপাতি ২৫০-৫৫০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর চাকু ১৫০-২৫০ টাকা, নারিকেল কোরানি ১০০-২০০ টাকা, মাংস কাটার বটি ২৫০-৩০০ টাকা, আরো অন্যান্য কৃষি উপকরণে ধানকাটার কাঁচি, বটি, লাঙ্গলের ফলাসহ অন্যান্য তৈজসপত্রও ভালো দামে বিক্রয় হয়। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার শার্শা ইউনিয়নের নাভারন নতুন বাজার, পুরাতন বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামের হাট বাজারে এখন পুরোদমে পশু জবাইয়ের ছুরি, চামড়া ছাড়ানোর চাকু, নারিকেল কোরানি, মাংস কাটার চাপাতিসহ বিভিন্ন লোহার তৈরি জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন কামারেরা। সুত্রমতে, উপজেলার একটি পৌরসভা সহ ১১ ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক কর্মকার সরাসরি নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের নিখুঁত কাজের সুনামের জন্য পাশের গ্রাম থেকে লোকজনও ছুটে আসেন বেনাপোলে। কেননা তাদের পেশাগত আচরণও মুগ্ধ করে সবাইকে। শত পরিশ্রমের মাঝেও হাসি মুখে কথা বলে ক্রেতাদের মন জয় করার কারণে অনেকেই খুশি মনে তাদের কিছু বাড়তি টাকা দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। উপজেলা ইউনিয়নের গ্রামের কয়েকজন কর্মকার জানান, এমনিতে সারা বছর কাজকর্ম অনেক কম থাকে। এর মধ্যে কয়দিন পর পর লোহার দাম বেড়ে যায়। এতে তারা বেকায়দায় পড়েন। ভালো চালান থাকলে আগে থেকে লোহা কিনে রাখতে পারলে ভালো লাভ পাওয়া যেতো বলেও বেশ কয়েকজন জানান। পশু জবাই থেকে শুরু করে মাংস তৈরির কাজে প্রয়োজনীয় ওইসব হাতিয়ারের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। তাই ঈদের পূর্বেই কোরবানির পশু জবাই কাজের হাতিয়ার সংগ্রহে কামারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন স্থানীয় কসাই, কৃষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ। এ সময় শার্শা কামারবাড়ি মোড়ে কামার প্রদীপ চন্দ্রও সবুজ,নাভারন কামার পাড়ার বাসিন্দা বরূন, লক্ষণপুর বাজারের দিলীপ, প্রদীপ, মানিক, বাগ আচড়া,ডিহিসহ অনেকেই জানান, ঈদে দা, চাপাতি ও ছুড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় আমাদের কাজের ও ব্যস্ততা বেশি। তবে বাজারে আমদানিকৃত হাতিয়ার আসায় আমাদের তৈরি হাতিয়ারের চাহিদা বহুগুণে কমে গেছে। ফলে পূর্বপুরুষদের এই পেশা ধরে রাখা দুষ্কর হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

সারাদেশ এর আরও খবর: