কমলগঞ্জে ভাড়াটিয়া উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত ১৫: এলাকায় টান টান উত্তেজনা।

 প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন   |   সারাদেশ




মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দোকানকোটার ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী-পুরুষসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। গত রবিবার (৬ এপ্রিল) উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের জাঙ্গালীয়া গ্রামে এ সংঘর্ষ ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ কমলগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও এখনো আমলে নেয়নি থানা পুলিশ। ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকায় উভয় পক্ষের মানুষের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। আবারো যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী  সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে।


সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে মুকিদ মিয়া (২২), ছোবহান মিয়া (২৫), সাইফুর মিয়া (২৮), ফজিজুন বেগম (৪০), শেফালী বেগম (৪৫), মিলাদ মিয়া (২৩), মন্ধান মিয়া (৫০)। তারা সবাই কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।


সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগে অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের জাঙ্গালীয়া গ্রামের মৃত বারিক মিয়ার ছেলে আব্দুল মতিন (৬০), জুয়েল মিয়া (৩৫), রাসেল মিয়া (৩৪), রশিদ মিয়া (৫০), মন্নান মিয়া (৬০), ময়ুরী বেগম (৫০)।


অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে জায়গার বিষয়াদি সহ পরিবারের বিভিন্ন বিষয় নিয়া বিরোধ হয়ে আসছে অভিযুক্ত আব্দুল মতিন মিয়ার পরিবারের সাথে রকিব মিয়ার। প্রায় ৪ বছর পূর্বে জায়গা জোরপূর্বক দখল করে বাজারে একটি দোকান তৈরী করেন আব্দুল মতিন। সেই দখলকৃত জায়গায় ভাড়া নিয়ে পোল্ট্রির ব্যবসা করে আসছে মুকেদ মিয়া। গত শনিবার রাতে দোকান ছাড়ার কথা বলা হয় মুকেদ মিয়াকে। কিন্তু কিছুদিন দোকান খুলে রেখে বকেয়া টাকার টাকা তুলার জন্য কিছুদিন দোকান খুলা রাখার সময় চায় মুকেদ মিয়া। তাহার এই প্রস্তাবে রাজি হয় আব্দুল মতিন। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে দোকানের বিষয়কে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে করে অভিযোগকারী রকিব মিয়ার পরিবারের ৭জন ও মতিন মিয়ার পরিবারের দুই সদস্য আহত হয়। এসময় ঝগড়া ঠেকাতে এসে বাজারের ব্যবসায়ী ৬জন সহ মোট ১৫জন গুরুত্বর আহত হয়। তারা সবাই কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে । তাদের মধ্যে গুরুত্বর আহত রকিব মিয়র পরিবারের ৭জন কে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরন করলে তারা সবাই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।


জাঙ্গালীয়া বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল আজিম জানান, দোকান কোটার ভাড়াটিয়ার ঘর ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে মো. আব্দুল মতিনের সাথে রাতে আলাপ করে পরদিন সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে রাতেই ব্যবসায়ীদের পক্ষে দোকান কোটায় তালা মারা হয়। আমরা তালা মেরে যাওয়ার পর রশিদ মিয়া এসে তালা ভেঙ্গে ফেলে। এসময় খবর পেয়ে তালা ভাঙ্গার ব্যাপারে জানতে চাইলে রশিদ, মতিন, জুয়েল, রাসেল মিয়া, মন্নান মিয়া ও ময়ুরী বেগম দা ও লাটিসোটা নিয়ে আর্তকিত ভাবে হামলা চালায়। হামলায় রকিব মিয়া ও পরিবারের লোকজন গুরুত্বর আহত হয়। এদিকে হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে বাজারে আগত কয়েকজন তাদের হাতে আহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দোকান ভাড়াকে কেন্দ্র করে এমন সহিংস ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা দ্রুত প্রশাসন যেন কঠোর হস্তক্ষেপ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।


থানায় করা অভিযোগকারী রকিব মিয়া জানান, আমাদের পরিবারের ৭-৮জন পুরুষ মহিলা গুরুতর আহত হয়েছে। তারা সবাই এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমি এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। প্রশাসন যেন দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’


অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত মতিন মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া বলেন, ‘রকিবকে দোকান কোটা ছাড়ার জন্য এক মাস আগে বলা হলেও সে দোকান ছাড়তে টালবাহানা করতে থাকে। এই ঘটনার সাথে আমাদের কেউ জড়িত নয়। আমার চাচাতো ভাই রশিদ মিয়া তালা ভাঙ্গার পর তৃতীয় কোন পক্ষ ফায়দা হাসিলের জন্য এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে এবং হামলায় আমাদের পরিবারের ২ জন আহত হয়েছে।’


কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি।


কমলগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত শামীম আকনজি বলেন, ঘটনায় উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে, তদন্ত ক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সারাদেশ এর আরও খবর: