বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উৎসব এটি হয়ে উঠুক ইতিহাস, সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রের এক দীপ্ত উদযাপন।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ হাসিনুজ্জামান মিন্টুঃ থেকে: বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণকে ঘিরে ঠাকুরগাঁওয়ে বইছে উৎসবের আমেজ। শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে জনপদ—সব জায়গা যেন সেজেছে রঙে, আলোয় ও প্রাণের ছোঁয়ায়। এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও জেলা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত শতবর্ষী বটগাছ, যার ছায়াতলে প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গতকাল সোমবার (১৪ এপ্রিল) ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪৩২ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এবার উদযাপন করছে তাদের ৫৪তম বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। শতবর্ষী বটগাছের নিচে নিক্বনের পরিবেশনায় শুরু হয় দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব। পরে জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য ও পথনাটকের মাধ্যমে যোগ দেয় উৎসবে। সংগীতের সুর, নৃত্যের তালে, কবিতার ছন্দে ঠাকুরগাঁও যেন নতুন প্রাণ খুঁজে পেয়েছে।
বর্ষবরণ উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রধান সড়কগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়েছে। সকাল থেকেই বের হয় নানা রঙের পোশাক পরিহিত মানুষের ঢল। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়, যাতে অংশগ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তাঁদের উপস্থিতি জনতার উৎসাহে ভিন্নমাত্রা যোগ করে।
নববর্ষ উপলক্ষে স্থানীয় হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানে থাকছে দই-চিড়া, পান্তা-ইলিশ, আলু ভর্তা, সরষে ইলিশসহ নানা বাঙালি পদের আয়োজন। একই সঙ্গে শহরের বিভিন্ন স্থানে বসেছে দেশি পণ্যের বাহারি দোকান, নাগরদোলা, পুতুলনাচ, মাটির খেলনা এবং হস্তশিল্পের স্টল।
এবারের নববর্ষ উদযাপন যেন তরুণদের জন্য হয়ে উঠেছে এক মুক্তির বার্তা। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর প্রথমবারের মতো নির্ভয়ে, উন্মুক্তভাবে তারা তাদের সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা উদযাপন করছে। এ যেন এক সাংস্কৃতিক নবজাগরণ—যেখানে সংস্কৃতি আর গণতন্ত্র মিলেছে একই প্ল্যাটফর্মে।
এবারের বর্ষবরণে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে কর্নেট সাংস্কৃতিক সংগঠন। তারা পথশিশু ও বস্তির শিশুদের মাঝে নতুন জামা কাপড় বিতরণ করে উদযাপন করেছে নববর্ষ। নতুন পোশাকে শিশুদের আনন্দঘন মুখ যেন উৎসবকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে।
উৎসবের নির্বিঘ্ন আয়োজন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন গ্রহণ করেছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও কাজ করছে সেবাদান ও তথ্য সরবরাহে, যাতে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারে আয়োজনে।
এই নববর্ষ শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, স্বাতন্ত্র্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক। বহুদিন পর আমরা সত্যিকারের উৎসবের আনন্দে মাতছি।”
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁও যেন রূপ নিয়েছে এক বিশাল সাংস্কৃতিক চত্বরে—যেখানে মিশেছে বাঙালির প্রাণ, রঙ, শব্দ ও ঐতিহ্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। এই উৎসব শুধু সময়ের স্রোতে ভেসে যাওয়া একটি দিন নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রের এক দীপ্ত উদযাপন।