কবিতাঃ অগ্নিস্নাতা।
এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার পিপিএম
শুক্লাত্রয়োদশীর চাঁদটাকে জানালার ফাঁক দিয়ে
আজ একটু বিবর্ণ মনে হয় কণিকার!
গুমোট মেঘের আড়ালে কিছুটা নিঃষ্প্রভ হয়ে আছে।
মনখারাপ?
কণিকাদের মন থাকতে নেই!
ওরা যে পতিতা!
কিন্তু,প্রতিদিন সমাজপতিরাই ওদের কাছে পতিত হয়।
গহীন নিস্তব্ধতার মাঝে বুক নিংড়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাঃস।
কষ্টের রং নাকি নীল!
তাহলে ওর শরীরটা এত ফর্সা কেন !
ওর সব কষ্ট একসাথে কি ঐ আকাশের সমান হয়নি এখনও !
মা বাবার বড় আদরের মেয়ে ছিল ছোট্ট কণিকা।
দেখতে নাকি মায়ের মতই সুন্দর !
সৌন্দর্য ! আহাঃ, চাঁদেও তো গ্রহণ লাগে!
সেই বিভীষিকার রাতে চিরকালের মত গ্রহন লেগেছিল ষোড়শী কণিকার!
রাতের আঁধারে মা বাবার বুক থেকে তুলে এনে সমাজের সবচেয়ে নোংরা নর্দমায় ফেলে গিয়েছিল তাকে !
সেই থেকে প্রতিদিন প্রতি রাত সহস্র হায়েনারা খুবলে খেয়েছে তার শরীরটাকে!
বিষাদের পাহাড় জমে আছে শ্যাওলা পড়া গনিকালয়ের জীর্ণতায়।
গায়ে সুগন্ধীর প্রলেপ!
ঈশ্বর কি গন্ধবিলাসী?
কনিকার শরীরের ঘ্রান কি দেবালয়ের চৌকাঠ পেরিয়েছে কখনও?
এখানে তিনি নির্বিকার।
শুধু,কণিকার রাঙা ঠোঁটের হাসি, কাজল মাখা চোখের কটাক্ষ দেবতাদের তাচ্ছিল্য করে যায়।
এখানে রাতের দৈর্ঘ্য অনন্ত!
শরীরের প্রতিটি স্বেদবিন্দু সাাক্ষী হয়ে থাকে এক একটি মহাকাব্যের!
সব সহ্য হয়ে গেছে এখন।
নিজেকে তার মাঝে মাঝে ধরিত্রীর মত মনে হয়!
সর্বসহিষ্ণু ?
তবু,আর কত?
কার পাপে আজ এই নিত্য অগ্নিস্নান?
দেহপসারিনী?
কখনও ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল সে?
মনে পড়ছে সেই ছেলেটাকে -
খুব অগোছালো, এলোমেলো স্বভাবের সেই ছেলেটা!
নাম মনে পড়ে না।
কলেজ থেকে জানতে এসেছিল কণিকাদের কথা!
সেই প্রথম কেউ-
খদ্দের না হয়েও ওর হাতে জল খেয়েছিল তৃপ্তি করে!
বোকা ছেলে !
কণিকাদের ঠোঁটে আলো নিভিয়ে চুমু খাওয়া যায়,
কিন্তু, ওদের হাতে জল খাওয়া যায়না!
লেখক - পুলিশ সুপার, গীতিকবি, প্রাবন্ধিক ও কন্ঠ শিল্পী।