কমলো পার্কিং ফি: ভারতের বন্দর ব্যবহারকারীদের ধর্মঘট প্রত্যাহার
মনা,বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধিঃ
বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতে বনগাঁ কালিতলা পার্কিং এর নতুন পার্কিং ফি
কমানোর নির্দেশ আসার পর পরই ওপারের ৮টি সংগঠন নিয়ে গঠিত পেট্রাপোলে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট সমন্বয় কমিটি তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় রবিবার থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি পুনরায় সচল হবে বলে ওপারের বন্দর ব্যবহারকারী সূত্রে জানা গেছে।
বর্ধিত পার্কিং ফি কমানোর দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চলছিল বনগাঁ শহরে। যার ফলে বুধবার ১৬ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় সীমান্তের আমদানি বাণিজ্য। এর আগে গত ১০ মার্চ থেকে কোন পণ্যবাহী ট্রাক বের হয়নি পার্কিং এলাকা থেকে। গত বুধবার (১৬ মার্চ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পরিবহন দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয় নতুন পার্কিং ফির কথা।
এতে বলা হয় এখন থেকে প্রথম ৩ দিন পার্কিং ফি ১০০ টাকা। পরের ৪ দিন ১৫০ টাকা করে। এর পরের সপ্তাহ ৩০০ টাকা করে ধার্য্য করা হয়েছে পার্কিং ফি। নতুন পার্কিং ফি ঘোষনার পর রাতেই পার্কিং ফি কাটা শুরু হয়। কিন্তুু সার্ভার সমস্যার কারণে ওই রাতে মাত্র একটি ট্রাক পার্কিং থেকে বের হয়। শুক্রবার ও শনিবার পার্কিং এ আটকা পড়া ট্রাকগুলো ছাড় হয়েছে। সে সব পণ্যবাহী ট্রাক বর্তমানে পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিং এ বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। রোববার সকাল থেকে এসব ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করবে।
ব্যবসায়ীদের জানান, নতুন পার্কিং ফির রেট অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ৬১ টাকা ৮২ পয়সা। যা আগে পৌর সভা দায়িত্বে থাকার সময় ছিল ৮০ টাকা। পার্কিং ফি কমে যাওয়ায় সম্ভবত খুশি ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে পেট্রাপোল এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, বর্ধিত পার্কিং ফি কমানোর বিষয়ে রাজ্য সরকার ও পরিবহন দফতরকে পত্র দিয়ে জানানো হয়। এর পর ১৬ মার্চ নতুন করে পার্কিং ফি নির্ধারন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। কমানো হয় পার্কিং ফি। এর ফলে আগামী দিনে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে ৩৮ দিনের পার্কিং এ থাকা একটি পণ্যবাহী ট্রাকের পার্কিং ফি এখন আসছে ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। প্রতিদিন হিসেবে ৬১ টাকা ৮২ পয়সা ধার্য্য করা হয়েছে। রাজ্য সরকার আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে পার্কিং ফি বর্তমানে যে স্থানে নিয়ে এসেছে তাতে ব্যবসায়ীদের অনুকুলে ব্যবসা পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানিয়ে পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, নতুন রেটে ১৬ মার্চ একটি ট্রাক পার্কিং থেকে বের হয়েছে। সার্ভার সমস্যার কারণে আর কোন ট্রাক বের হতে পারেনি। শুক্র ও শনিবার কয়েক‘শ ট্রাক পার্কিং ফি দিয়ে পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিং এ এসেছে। যা রবিবার সকালে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করবে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমরা খুশি। রাজ্য সরকার যেমন পার্কিং ফি কমিয়েছে তেমনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন, পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিং এর ফি কমানো হোক। সেন্ট্রাল পার্কিং এ ৩দিন ট্রাক থাকলে ১১/১২ শ টাকা দিতে হয়। ব্যবসার স্বার্থে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত পার্কিং ফি কমানো। প্রশাসন কঠোর নজর দিলে সীমান্ত বাণিজ্য আরো বৃদ্ধি পাবে।
এর পাশাপাশি বনগাঁ পার্কিং এ ট্রাকের ফলস এন্ট্রির একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। ফলস এন্ট্রির নাম করে ডিটেনশন বাড়িয়ে দিয়েছে। ৩০ থেকে ৩৮ দিনের ডিটেনশন কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। ফলস এন্ট্রি চক্রের সাথে বাইরের বড় বড় কর্পোরেশন সংস্থা ও লজিস্ট্রিক কোম্পানী যুক্ত আছে। তাদের কোন মাল না থাকলেও ট্রাকের নম্বর এন্ট্রি করে বসে থাকে। তাতে বনগার বেশ কিছু অসাধু চত্র যুক্ত আছে। প্রশাসন কঠোর হলে বনগার কালিতলা পার্কিং এ ডিটেনশন ১৫ দিনে চলে আসবে।
পার্কিং ফি কমানোর দাবিতে বনগার শহর এলাকার বন্দর ব্যবহারকারী ৮টি সংগঠন সম্মিলিত ভাবে একপোর্ট-ইমপোর্ট সমন্বয় কমিটির ব্যানারে গত ১০ মার্চ থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন।
এ ব্যাপারে এ সংগঠনের আহবায়ক খোকন পাল বলেন, পার্কিং ফি কমে যাওয়ায় আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তবে গত দিনের সার্ভার খারাপ থাকায় পাকিং ফি কাটা বন্ধ ছিল। আবার শুরু হয়েছে। নতুন করে যে পার্কিং ফির বিজ্ঞপ্তি এসেছে তা আগের চেয়ে অনেক কম। এতে আমরা সবাই খুশি।
এ ব্যাপারে বনগাঁর মহকুমা শাসক প্রেমবিভাস কাঁসারী বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে সমস্যা তৈরি করার চেস্টা চলছে। পরিবহন ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দেয়ার চেস্টা চলছে। ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। রাস্তার মাঝে ট্রাক আটকিয়ে দেওয়া, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার চেস্টা করলে নির্দিস্ট অভিযোগ পেলেই আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ওপারে পার্কিং ফি কমানোর সিদ্ধান্তে বনগাঁ একপোর্ট-ইমপোর্ট সমন্বয় কমিটি তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আগামীকাল রবিবার (২০ মার্চ) থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি সচল হয়ে বলে ওপারের বন্দর বন্দর ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন।