সন্তানহারা মায়ের করুন আর্তনাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
চোখের সামনে নিজ সন্তানের নির্মম হত্যাকাণ্ড দেখে মা এখন বাকরুদ্ধ। নির্মম ভাবে খুন হওয়া ছেলে সুজন শেখের ছবিই এখন মা সাথি বেগমের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
এই নিঃসংশ ঘটনার সুত্রপাত মসজিদে নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে।
গত ১২ এপ্রিল রবিবার রাতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী ইউনিয়নের বাহাড়া গ্রামের পশ্চিম পাড়া মাতুব্বর বাড়ি জামে মসজিদে। সরকার ঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ী মজিবর শেখ ৫ জনের বেশি লোক মসজিদে না আসতে অনুরোধ করেন। কিন্তু একই পাড়ার বাসিন্দা বাকি মাতুব্বর ও মতিক মাতুব্বর বিষয়টি মানতে না চাইলে মসজিদে উপস্থিত মজিবর শেখের সাথে বাকি মাতুব্বর ও মতিক মাতুব্বরের বাক বিতন্ডা হয়। পরে এশার নামাজ শেষে স্থানীয় মুরব্বিদের মধ্যস্ততায় বিষয়টি মিমাংসা হয়ে যায়।
কিন্তু পরের দিন সকালে ১৩ এপ্রিল সোমবার বাকি মাতুব্বর, মতিক মাতুব্বর, ইলিয়াস মাতুব্বর, মহিন মাতুব্বর, ওলি মাতুব্বর সহ অনেকেই পূর্বপরিকল্পিত ভাবে মজিবর শেখের বাড়ীতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা একপর্যায়ে মজিবর শেখের ছেলে সুজন শেখ কে টেনে হিছড়ে ঘর থেকে বের করে এনে এলোপাতাড়ি ভাবে কোপাতে থাকে। উপরর্জপরি কোপের আঘাতে ঘটনাস্থলেই সুজন সেখ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
এ সময় বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা সুজন শেখের বাবা,চাচা ও ভাই সহ ৮ জন কে মারাত্মক আহত করে। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাজার চেষ্টা করেও ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি বাবা মা তার প্রিয় সন্তানকে।
এই ঘটনায় পরদিন ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার নিহতের বাবা মজিবর শেখ বাদি হয়ে ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে,এবং অজ্ঞাত নামা ৭ থেকে ৮ জনের নামে মুকসুদপুর থানায় একটি হত্যা
মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর থেকে আসামি পক্ষের লোকজন পলাতক আছে। তারা বিভিন্ন ভাবে বাদী পক্ষকে হুমকি ধামকি ও ভয় ভীতি দিয়ে আসছে।
সুজনকে হারিয়ে তার মা,বাবা,ভাই বোন ও সুজনের সদ্যবিবাহিত স্ত্রীর বুকফাটা আর্তনাদে এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।
সুজনের বাবা মজিবর শেখ বলেন, প্রতিবেশী বাকি মাতুব্বর ও মতিক মাতুব্বরদের ভয়ে আমি পরিবার সহ প্রায় এক যুগ ধরে ঢাকায় বসবাস করছি। এবার করোনা ভাইরাসের ছুটিতে ঢাকা থেকে নিজ গ্রামের বাড়ী বাহাড়ায় আসি।
আর গ্রামে আসার পর থেকেই বাকি মাতুব্বর ও মতিক মাতুব্বর আমাকে হুমকি দিয়ে আসছিল। তারা এক পর্যয়ে আমাদেরকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে।
তিনি বলেন আমার সন্তানকে হত্যা করেই থেমে নেই, এখন মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে সহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
বর্তমানে পরিবার নিয়ে আমি ভয়ের মধ্যে সময় পার করছি।আমি আমার সন্তান হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিপক্ষের ভয়ে গ্রাম ছাড়া মজিবর শেখের পরিবারটি। করোনার ছুটিতে ঢাকা থেকে নিজ গ্রামের বাড়ীতে আসায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করলো ছেলেটিকে।
সুজন শেখের মা সাথি বেগম এ প্রতিবেদককে দেখেই আর্তনাদ করে উঠলেন। ছেলে হারানোর শোক সইতে না পেরে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন।বাকরুদ্ধ প্রায় মা বলেন, আমার সন্তান দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।
আমি আমার সন্তানকে আর ফিরে পাবো না। কিন্তু যারা আমার সন্তান কে খুন করলো আমি নিজ চোখে সেই সব খুনীদের উপযুক্ত বিচার দেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে চাই।
এদিকে হত্যা মামলার তদন্তকারি অফিসার মীর সাজেদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে,তিনি আলোচিত বার্তা কে জানান মামলার তদন্ত কাজ চলছে।যারা খুন করেছে তারা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা যাচ্ছে না।তবে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য নিয়মিত অভিজান চলছে।