অবৈধ পথে খনিজ মাটি বালু সংগ্রহের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পুলিশের চার্জশীট! আদালতের স্থায়ী জামিন বহাল
স্টাফ রিপোর্টার :
অবৈধ পথে খনিজ বালু সংগ্রহের খবর পত্রিকায় প্রকাশ করায় মাধবপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক আমাদের সময় ও দৈনিক সিলেট মিরর পত্রিকার প্রতিনিধি মোহা. অলিদ মিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সাজানো মিথ্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দীর্ঘ শুনানি শেষে আসামীদের স্থায়ী জামিন মুঞ্জর করেন। এর আগে বাংলাদেশ হার্ডল্যান্ড সিরামিকস লিমিটেডের (বিএইচএল) ব্যবস্থাপক (এইচ আর এডমিন) মোঃ আবু সালমান আল রিজভী সাংবাদিক, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মাধবপুর থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা দায়েরের পর থেকেই মাধবপুর প্রেসক্লাব ও কর্মরত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সাজানো মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ নিরপেক্ষ তদন্তের দাবী জানিয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী ও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজির সাথে সাক্ষাত করে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়েছিল। প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে সর্ম্পূন তথ্য প্রমানকে উপেক্ষা করে সিরামিকস ফ্যাক্টরির পক্ষালম্বন করে মিথ্যা মামলায় পুলিশের দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মিদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের জগদিশপুর নামকস্থানে বিএইচএল কোম্পানী লিঃ সিরামিক ও সিলিকেট তৈরীর জন্য কাঁচামাল হিসাবে খনিজ বালু ও মাটি আহরণ করে থাকে। স্থানীয় কতিপয় লোকের সহায়তায় চোরাইপথে বালু ও মাটি আনতে থাকলে স্থানীয় বালুমহালের ইজারাদার আলফাজ মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন গত বছরের ১৩ মার্চ। অপরদিকে জগদিশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ খাঁন ওই কোম্পানীকে বকেয়া ইউপি কর পরিশোধ ও ট্রেড লাইসেন্স গ্রহনের জন্য নোটিশ দেন। এর পাল্টা হিসেবে একই বছরের ১৬ মার্চ বিএইচএল এর এমডি মোঃ সাহেদুল ইসলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সচিব বরাবরে জগদীশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ খাঁনের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগ দেন। এ বিষয়ে গত বছরের ২১ মার্চ দৈনিক সিলেট মিরর পত্রিকায় ‘সিরামিকস কারখানায় যাচ্ছে চোরাই মাটি বালু’ এবং ২২ অক্টোবর মাধবপুরে অনুমোদনহীন ক্যামিকেল ফ্যাক্টরি, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ’
এর আগে গত বছরের ২১ মার্চ 'সিরামিকস কারখানায় যাচ্ছে চোরাই মাটি বালু, সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব' এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে বিএইচএল কোম্পানীতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত বালু ও মাটি ওই সিন্ডিকেট সরবরাহ করে বলে উল্লেখ ছিল।
এদিকে বিএইচএলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্ত করে বিগত ৫ সেপ্টেম্বর মাধবপুরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ আলাউদ্দিন প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ইউপি চেয়ারম্যানের মাসুদ খাঁনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য যে, অভিযোগে চাঁদার টাকার অংক উল্লেখ করেনি বিএইচএলের ওই কর্মকর্তা। কিন্তু তদন্তকালে তিনি লিখিতভাবে ২৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির কথা উল্লেখ করেন। অপরদিকে বিষয়টি তদন্তনাধীন থাকা অবস্থায় বিএইচএলের কর্মকর্তা আবু সালমান আল রিজভী গত ২৯ আক্টোবর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ খাঁন, সাংবাদিক অলিদ মিয়া, শাকিল, নাসির মিয়া, কদ্দুছ মিয়া ও শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মাধবপুর থানায় চাঁদাবাজি মামলা করেন। এস আই আব্দুল কাদের তদন্ত শুরু করার দুইদিনের মধ্যে পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলীর নির্দেশে মামলাটি গোয়েন্দা শাখার এস আই অভিজিত ভৌমকের কাছে ন্যস্ত করা হয়।
এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত না হওযায় চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ খানকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এমতাবস্থায় মামলার পুলিশ রিপোর্ট নিজেদের অনুকূলে আনতে মরিয়া হয়ে উঠে বি এইচ এল কর্তৃপক্ষ। চার্জশীটে দেখা যায়, ৪ পুলিশসহ মোট ১৪জন সাক্ষী রয়েছেন। পুলিশ ছাড়া বাকি সব সাক্ষীই কোম্পানীতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কর্মরত। প্রায় ৭ মাস দায়সারা তদন্ত শেষে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন না করে চলতি বছরের ২৩ মার্চ এজাহারের অনুরূপ চার্জশীট দিয়েছিল।
সাংবাদিক অলিদ মিয়াকে মামলায় অর্ন্তভূক্ত করায় উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি এর তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানান।