ধনবাড়ীতে সাংবাদিক পরিচয়ে বিয়ে অবশেষে সখীপুরের তরুনীর মামলা

 প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন   |   রাজনীতি


সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারা করে এক তরুণীকে বিয়ের পর শ্বাশুড়ী থেকে স্ত্রীর পায়ের নুপূর চুরির ঘটনায় বেড়িয়ে এসেছে থলের বিড়াল। প্রতারণার শিকার ওই যুবতী নারী  বিচারের দাবীতে মামলা দায়ের করেছেন টাঙ্গাইল আদালতে । ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক যুবতীর সাথে। 

ভোক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করে জানান, পড়াশোনায় ৫ম শ্রেণির গন্ডি পার হতে না পারলেও নিজেকে একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিতেন শাহ পরানুল ইসলাম রণি। নিজেকে দৈনিক খোলাকাগজ সহ বিভিন্ন টিভি পত্রিকার সংবাদিক দাবি করতেন তিনি। এসব মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে টাঙ্গাইলের  এলাকায় ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন তিনি। সাংবাদিকতার পরিচয়ে আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাঙ্গাইল কোর্টে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে  বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর আমাকে ৫,০০,০০০/— (পাঁচ লক্ষ) টাকা যৌতুক আনিয়া দিতে বলে বাবারবাড়ী থেকে ।  টাকা দিতে অস্বীকার করিলে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে চর থাপ্পর ও কিল, ঘুষি মারে  এককাপড়ে বাবার বাড়ীতে পাঠানোর হুমকি দেয়। এভাবে একাধিক বিয়ে করে ব্লাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চাদাবাজী ব্লাকমেইল এর পাশাপাশি সে "উচঈ ঘবিং"  তার নিউজ একটি ফেসবুক পেজ এর সংবাদকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। সে সাংবাদিকতার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধনবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতো। এছাড়াও বিবাদমান দুই পক্ষের সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে সমস্যা সমাধানের মধ্যস্থতা করার জন্য টাকা দাবি করতো। বিভিন্ন সময়ে আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সু—সম্পর্ক রয়েছে দাবী করে আইনী সমস্যা সমাধান করে দিবে বলেও টাকা নিতো। পাশাপাশি আইনী জটিলতা আছে এমন কিংবা আদালতে বিচারাধীন জমি উদ্ধারের নাম করে বিবাদমান পক্ষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে বাসায় নিয়ে আসতো।

রনি কথিত নামধারী সাংবাদিক স্ত্রী ও দুই সন্তান  বর্তমান থাকা অবস্থায় নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে আমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী করে। পরবর্তীতে সে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় শারীরিক সম্পর্ক করে। আমি তাকে বিয়ের কথা বললে সে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বাড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে শাহ পরানুল ইসলাম রণি  কথিত সাংবাদিক নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে আমাকে ১৩ জানুয়ারী ২০২৫ তারিখে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। সে যৌতুকের জন্য  বিভিন্নভাবে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন শুরু করে।

এক পর্যায়ে আমি বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারে  এর আগেও শাহ পরানুল ইসলাম রণি একাধিক বিয়ে করেছে। আগের বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং যৌতুকদাবী করে । 

শুধু তাই নয় আমি জানতে পেরেছি , নামধারী সাংবাদিক রনি চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধনবাড়ীর চালাষ চৌরাস্তায় মার খেয়েছেন জনতার হাতে। এবং কী এঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ধনবাড়ী থানাপুলিশ ও পুলিশ সুপার, ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের  কাছে লিখিত অভিযোগ রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগের সময় ধনবাড়ীর হীরা উপজেলা চেয়ারম্যানের ডান হাত সাংবাদিক জহরুল ইসলাম মিলনের সাথে ঘুরে আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জয়গা থেকে হুমকি দিয়ে  মোটা অংকের চাঁদার টাকা নিয়ে আসতো। রণি মূলত একটি মাদ্রাসা থেকে ৫ম শ্রেনী পাস করে বিভিন্ন মসজিদে খাদেম গিরি করতো। 

ভুক্তভোগী নারী মামলার অভিযোগে বলেছেন, আমি একজন গ্রামের সহজ সরল, নিরীহ, আইনমান্যকারী একজন মহিলা । অপরপক্ষে আসামী আমার স্বামী একজন প্রতারক, ভন্ড, দুশ্চরিত্রবান, নারী লোভী, নারী নির্যাতনকারী যৌতুক লোভী লোক বটে। আসামীর সাথে বিগত ১৩/০১/২০২৫ ইং তারিখে উভয়পক্ষের আত্মীয়—স্বজনের উপস্থিতিতে আলাপ—আলোচনার মাধ্যমে ইসলামী শরা—শরীয়তের বিধান মতে ৭,০০,০০১/— (সাত লক্ষ এক) টাকা দেনমোহর ধার্যে রেজিষ্ট্রি কাবিনমূলে বিবাহ সম্পন্ন হয়। আমার বিবাহের সময় আমার অভিভাবক আমার পিতা নগদ ২,০০,০০০/—(দুই লক্ষ) টাকা এবং আমাকে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য গলায় ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের হাড়, ৮ আনি ওজনের কানের ঝুমকা, হাতে ১ ভরি ওজনের ২টি বালা, মূল্য অনুমান ২,৫০,০০০/— (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা, ৫০,০০০/— (পঞ্চাশ হাজার) টাকার দামী কাপড়—চোপড়, প্রসাধনী সামগ্রী দিয়া সাজাইয়া দেওয়ার পর আসামী আমাকে তার স্ত্রী হিসাবে তাহার বাড়ীতে তুলিয়া নেয়। আমি উক্ত আসামীর সহিত স্বামী—স্ত্রী হিসাবে ঘর—সংসার ও দাম্পত্য স্বত্ব পালন করি এবং ইহাতে আমাদের বিবাহটি কনজুমেটেড হয় । এহেন অবস্থায় আসামী ব্যবসা করিবে বলিয়া আমার পিতার নিকট হইতে ৫,০০,০০০/— (পাঁচ লক্ষ) টাকা যৌতুক আনিয়া দিতে বলে। আমি অস্বীকার করিলে এবং অপারগতা প্রকাশ করিলে আসামী আমাকে মাইরপিট ও মানসিকভাবে নির্যাতন করিয়া আসিতে থাকে। আমি আমার সংসারের কথা চিন্তা—ভাবনা করিয়া আসামীর সকল জুলুম অত্যাচার নিরবে সহ্য করিয়া আসিতে থাকি। ঘটনার ১ম তারিখ, সময় ও স্থানে আসামী আমাকে আমার পিতার নিকট হইতে ৫,০০,০০০/— (পাঁচ লক্ষ) টাকা যৌতুক আনিয়া দিতে বলিলে আমি অস্বীকার করিলে আসামী আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করিয়া চর থাপ্পর ও কিল, ঘুষি মারিয়া এককাপড়ে আমাকে আমার পিতার বাড়ীতে পাঠাইয়া দেয়। আমি আমার পিতার বাড়ীতে আসিয়া ঘটনার বিষয়ে ছবিস্তারে বলি। অতঃপর ঘটনার ২য় তারিখ, সময় ও স্থানে আমার পিতা আসামীকে দাওয়াত দিয়া আনিলে দাওয়াত খাওয়ার পর আমার কতক মানিত সাক্ষীগণ সহ ও গণ্যমান্য কতিপয় লোকদেরকে ডাকিলে আসামী তাহাদের উপস্থিতিতে আমাকে বলে যে, আমার পিতার নিকট হইতে ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা যৌতুক দিতে বলে। তখন আমার পিতা ও মানিত সাক্ষীগণ আমাকে বিনা যৌতুকে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করিলে আসামী আমার পিতা এবং আমার মানিত সাক্ষীগণের অনুরোধ উপেক্ষা করিয়া চলিয়া যায় এবং যাওয়ার সময় আসামী বলিয়া যায় যে, ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা যৌতুক ছাড়া আসামী আমাকে নিবে না ও আমার সহিত ঘর—সংসার করিবে না। এমনকি হুমকি দেয় যে অন্যত্র বেশী টাকা যৌতুক লইয়া বিবাহ করিবে। আসামীর এহেন কার্যতায় আমি যৌতুকে শিকার হইয়া আমার পিতার বাড়ীতে অতিকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করিতেছে। ঘটনার অনেক সাক্ষী আছে। সাক্ষীগণ বিচারামলে ঘটনা প্রমাণ করিবে। আসামী আমার স্বামী বিধায় আপোষ—মিমাংসা করিয়া আমাকে নিয়া ঘর—সংসার করিবে এই আশায় থাকিয়া মামলা দায়ের করিতে বিলম্ব হইল। 

এঘটনায় অভিযুক্ত নামধারী চাঁদাবাজ সাংবাদিক রণির বাড়ীতে জানতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানায় রণি ও তার পরিবার পালাতক।

ভুক্তভোগী যুবতী নারী ও তার পরিবার প্রশাসনের কাছে বিচার দাবী করে জানান, এমন প্রতারক, ভন্ড, দুশ্চরিত্রবান, নারী লোভী, নারী নির্যাতনকারী যৌতুক লোভী লোককের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং  যাতে আর কারো জীবন নষ্ট করতে না পারে । যদি দ্রুত সঠিক বিচার না পাই তাহলে আমি সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন করব। আমি দেশবাসির কাছে বিচার চাইব।

রাজনীতি এর আরও খবর: