গোপালগঞ্জে তারুণ্যের পদচিহ্ন: ইতিহাসের নির্মম ব্যঙ্গ

মো: ইকবাল হোসেন: ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েছিলেন গোপালগঞ্জে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—গোপালগঞ্জ তাঁকে স্বাগত জানানো হয়নি। মঞ্চে ওঠার আগেই পতিত পলাতক স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের প্রবল প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিরোধের মুখে তিনি পড়েন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, তাঁকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে তড়িঘড়ি করে খুলনায় নেওয়া হয়। এই ঘটনা শুধু রাজনীতির ময়দানেই নয়, সেনা সদরে দপ্তরেও চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।
পরবর্তীতে স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদও চেয়েছিলেন গোপালগঞ্জে সভা ও সমাবেশ করতে। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ও সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণে থাকা সত্ত্বেও তিনিও পারেননি। একপ্রকার পরাজয় স্বীকার করেই নিরাপত্তাবেষ্টিত গাড়িবহর ঘুরিয়ে দিতে হয়েছিল তাকে। গোপালগঞ্জ যেন আওয়ামী লীগের এক অদৃশ্য দুর্গ ছিল—বাকি সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিষিদ্ধ এক প্রাচীর।
সেই গোপালগঞ্জেই আজ এক ভিন্ন চিত্র। ২০২৫ সালের ১৬ জুলাই সেখানে দাঁড়িয়ে এনসিপি নেতাকর্মী- নাহিদ ইসলাম, আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ, সার্জিস আলম, ডা: তাসনিম জারা সহ সকলে বুক ফুলিয়ে শ্লোগান দেয়—“মুজিববাদ, মুর্দাবাদ, নিপাত যাক, নিপাত যাক”। হাজারো প্রতিবন্ধকতা, বাধা, হামলা, এমনকি জীবনহানির মধ্যেও তাঁরা গিয়েছেন, দাঁড়িয়েছেন, কণ্ঠ উঁচু করেছেন। গোপালগঞ্জে কেউ হাসনাত আবদুল্লাহর মতো হাতে লাঠি নিয়ে ফোঁসফোঁস করে তেড়ে এসেছে, তবু পিছু হটেনি তারুণ্যের ঝাঁক।
এটাই কী ইতিহাসের নির্মম ব্যঙ্গ নয়? যে গোপালগঞ্জ একসময় রাষ্ট্রপতি ও সেনাশাসকদের ফিরিয়ে দিয়েছিল গণরোষে, সেখানেই আজ কিছু তরুণ সাহস করে প্রবেশ করেছে, প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে, আবার প্রস্থানও করেছে শ্লোগান ও সত্তার পরিপূর্ণ উচ্চারণে।
প্রশ্ন উঠে—এদের কি কেবল উপহাস করা উচিত? না কি অন্তত সাহসটুকুকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত? প্রশংসা ও সাপোর্ট করা উচিৎ।
অন্যান্য রাজনৈতিক দল যেখানে গত ১৬ বছরেও গোপালগঞ্জে ঢোকার সাহস করেনি। বরং দখলবাজি, ভাগাভাগি আর চাঁদাবাজির ঘূর্ণিতে নিমজ্জিত থেকেছে। সেখানে এই তরুণেরা প্রমাণ করেছে, তারুণ্যই পারে দেয়াল ভাঙতে, সাহস জাগাতে, এবং ইতিহাসের ব্যঙ্গাত্মক চক্রকে ভেঙে নতুন সত্য রচনা করতে।
তাই বলি—উপহাস করার আগে, একবার অন্তত গিয়ে দাঁড়াও গোপালগঞ্জের মাটিতে, শ্লোগান দেন, “মুজিববাদ, মুর্দাবাদ, নিপাত যাক, নিপাত যাক”। তারপর বলেন, কে সাহসী? কে কাপুরুষ?
-শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- ১নং কয়রা, কয়রা, খুলনা।