পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন কার্যক্রম এক ঠিকাদারের কবজায়
,
মোঃ ইমরান হোসাইন,
আমতলী,বরগুনা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিকাংশ মাটির কাজ ও অন্যান্য লাভজনক কাজের কার্জাদেশ তার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রনে রয়েছে জনৈক ঠিকাদার ইভানের। সাধারন ঠিকাদাররা আজ পথে বসতে পরেছে এবং আজ তাদের মাথায় হাত।
জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বড় মাপের নেতা ও পাউবোর কর্মকর্তাদেরও নাম ভাঙ্গিয়ে জনৈক ঠিকাদার ইভান সাধারন ঠিকদারদেরও কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এ সম্পর্কিত একটি অডিও রয়েছে।
বিভিন্ন ঠিকাদারদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডার প্রক্রিয়া জনৈক ইভান নামক এক ঠিকাদারের খপ্পরে আটকে পড়েছে। তার ব্যবহৃত দুটি লাইসেন্স যথাক্রমে মেসার্স আবুল কালাম আজাদ এবং মেসার্স মিজানুল আলমের নামে। কাজ পাবার প্রক্রিয়া হিসাবে তিনি যেসকল অপকর্মের আশ্রয় নিয়ে থাকেন।
ইভান অধিকাংশ সময় বিভিন্ন জেলার দপ্তরে দপ্তরে ঠিকাদারি কাজের উদ্দেশ্যে তার লাক্সারি জীপ গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ান এবং মাঝে মাঝে নিজ জেলা পটুয়াখালীতে অবস্থান করেন।
তিনি টেন্ডারবাজির মাধ্যমে অধিকাংশ কাজ বাগানোর উদ্দেশ্যে তার বন্ধু প্রতীম নির্বাহী প্রকৌশলীগনের কাছ থেকে ৩০০ (তিনশত) এর অধিক ভুয়া সনদ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ক্ষেত্রবিশেষে দপ্তরের শাখা কর্মকর্তা, ক্যাশিয়ার বা অন্য কোন স্টাফকে ম্যানেজ করে নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষর কম্পিউটার সফট কপিতে বসিয়ে প্রিন্টিং এর মাধ্যমে ভুয়া সনদ সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া তার নিজের এডিটিং করা ভুয়া সনদ নির্বাহী প্রকৌশলী দ্বারা যথার্থতা যাচাই করে নেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এসকল অপকর্ম করে দরপত্র মুল্যায়নে সবচেয়ে অধিক নম্বর নিয়ে বেশিরভাগ কাজের কার্জাদেশ এ দুটি লাইসেন্স এর নামে সংগ্রহ করে কাজগুলি অন্যান্য ঠিকাদারের কাছে চড়া মুল্যে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। কাজ বাস্তবায়ন শেষে ঠিকাদারগন বিলের চেক নিয়ে পাওনা সংগ্রহ করতে গেলে ভুরি ভুরি খাতের ভুয়া অজুহাত দেখিয়ে এত পরিমান কর্তন করে রাখে যে মুল কাজ বাস্তবায়নকারি ঠিকাদারের পথে বসার উপক্রম হয় বলে বিভিন্ন ঠিকাদার জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার আব্দুল্লাহ্ আল মুসা বলেন, ইভানের এ সকল কর্মকান্ড বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম পান্নার তত্বাবধানে হয়ে থাকে।
এছাড়া পদ্মা এবং মার্কেন্টাইল এ দুটি ব্যাংকের পটুয়াখালী শাখার ইজিপি আইডি হ্যাক করে অসংখ্য ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দাখিল করে জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ব্যাংক দুটিকে দেউলিয়া বানানোর উপক্রম করেছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ম্যানেজার সোহেল ফেরারী আসামির মতো পালিয়ে বেরাচ্ছেন এবং পদ্মা ব্যাংকের ম্যানেজার আলমগীর বরখাস্ত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু কোন অদৃশ্য শক্তির বলে তার বিরুদ্ধে এখনো ব্যাংক জালিয়াতির মামলা হয়নিা। ফলে বিভিন্ন ঠিকাদারসহ সাধারণ জনগন এই মুহূর্তে দুটি লাইসেন্স এবং ইভানকে সকল সরকারী দপ্তরে অবাঞ্চিত ঘোষণা করার জোড় দাবী জানিয়েছেন।
এবিষয়ে ঠিকাদার অলি,জানান-বরগুনা পানি উন্নায়ন বোর্ডের কাজ আজ একক হাতে জিম্মি।আমরা সাধারন ঠিকাদার আজ পথে বসতে পরেছি। আমরা এর প্রতিকার চাই। ঠিকাদার আসাদ জানান, ঠিকাদার ইভানের কাজই হচ্ছে পেপারস জাল ঝালিয়াতি করা বাংলাদেশের সকল প্রকৌশলীর সাথে সম্পর্ক করে কাউকে বোন জামাই, কাউকে ভায়রাভাই ডেকে কাজ ভাগিয়ে নেওয়া এবং নেতাদের নাম ভাংগিয়ে চলা।
ঠিকাদার মো, মুছাসহ আরও অনেকে জানান, বরগুনা পানি উন্নায়ন বোর্ডের প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম পান্না' স্যারের স্ত্রীকে ধর্মের বোন বানিয়ে ঠিকাদার ইভান দুলাভাই দাবী করে অধিকাংশ কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে ঠিকাদার ইভান বরগুনা পানি উন্নায়ন বোর্ডের কাজ এরকম ভাগিয়ে নিয়ে করতেন তিনি। কিছু দিন আগেও ব্লকের ২০ কোটি টাকার একটি কাজ এরকম ভাগিয়ে নিয়েছেন। আমরা বরগুনার সাধারন ঠিকাদার কাজ পাচ্ছি না। আমাদের সংসার আছে।
আপনাদের মাধ্যমে আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এসবের বিচার না হলে আমরা পথে বসে যাবো। এবিষয়ে অভিযুক্তকারী ঠিকাদার মোঃ ইভান জানান, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা। সবাই যেভাবে টেন্ডার দাখিল করেন আমিও সেভাবে করি কিন্তু প্রকৌশলী আমাকে কাজ দেন।
বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম তার কথিত শ্যালক ও শ্যালকের স্ত্রীকে তার বাসভবনে বসিয়ে একত্রে খাল কাটার চারটি কাজের টেন্ডার করেছেন এবং পরে একই ভাবে একত্রে মিলে তেরটি মাটির কাজের টেন্ডার করেছেন। তার শ্যালক ইভানের সাথে
যোগসাজশে বর্ণিত দুটি লাইসেন্সে বা তার ভাড়াকৃত অন্য কোন লাইসেন্সে সকল কাজের কার্জাদেশ দেবার পায়তারা করছেন। এ নিয়ে বরগুনার বেশিভাগ ঠিকাদার ব্যপকভাবে ক্ষিপ্ত।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম পান্না বলেন, ইভান নামের আমার কোন শ্যালক নেই অভিযোগের ব্যাপারে আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।