" তুমি কাছে নেই"

 প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২০, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন   |   বিনোদন


কবি - মোঃ রফিকুল ইসলাম :


চারিদিকে সবুজের সমারোহ,

দিগন্ত জোড়া মেঘের আনাগোনা, পাখিদের মুক্ত আকাশে অবগাহন - ই মনে

করিয়ে দেয়...

"তুমি কাছে নেই"...


জীবন নৌকার চরম বাস্তবতায় হেরে যাওয়া এক মাঝির কথামালা এটা ! 

যে আজ থেকে প্রায় ১৮ বছর আগে তার হৃদয়ে আঁকা ছবির মানসীকে হারিয়ে ফেলেছে !!!


কিছুটা উদাসীন কবি ভাবাপন্ন, শান্ত স্বভাবের ছেলে ইমনের

ছাত্র জীবনটা কেটেছে ঢাকাতে ।

লেখাপড়া করার সুবাদে ইমনের

মেস টা ছিলো তেজগাঁও সাত রাস্তা থেকে পূর্বে উত্তর বেগুন

বাড়িতে (যদিও  🍆 এর কোন বালাই নেই) !!!

চার তলা মেস - সুলতান ভিলার চতুর্থ তলায় থাকতো ইমন ! 

 ১ম থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত কারো মোবাইল বা টাকা হারিয়ে গেলে অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত কোন মারামারি হলে সবসময়

ইমনের স্মরনাপন্ন হতো সকলে ।

মেসে থাকাকালীন অবস্থায় ৪/৫

টি চুরি হয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধার করে দিয়েছে ইমন(কারণ মেসের লোক ই চুরি করতো) !

মেসের ঠিক উল্টো দিকে ছিলো ৫ তলা বিশিষ্ট ইসলাম ভিলা যেখানে ইমন টিউশনি করতো ।

একদিন ঘটে গেল আশ্চর্য জনক এক ঘটনা যেটা ইমন কোনদিন কল্পনাও করেনি ।

টিউশনি শেষে ঐ বিল্ডিংয়ের ছাদে একটু দাঁড়িয়েছে উদ্দেশ্য ছিলো ছাদটা ঘুরে দেখা আর পাশে অবস্থিত হাতির ঝিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া । কিন্তু হায় ..!

কিছুক্ষণ পরে হালকা গড়নের, স্মার্ট দুটি মেয়ে ইমনের সরাসরি সামনে এসে সমস্বরে বলে উঠলো - " আপনি একটা মদন"..!!!

দুজনের মধ্যে চশমা পরিহিত ছিপছিপে গড়নের সু-কেশী মেয়েটির হাসি মাখা মুখ আর চোখের তীক্ষ্ণ চাহনী হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল ইমনের।

হঠাৎই অপ্রস্তুত অবস্থায় এমন কথা শুনতে হবে-এটা আজব মনে হয়েছে ইমনের কাছে ।

'মদন' শব্দটি আগেই পরিচিত ছিলো কিন্তু আজ আবার নতুন করে শেল বিধিল অন্তরায় !

সেই থেকে শুরু...

ইমন তার ছাত্রী 

সুমাইয়া ফেরদৌস অথরা'র কাছে সবই জানতে পেরেছে ।

অথরাকে যখন পড়াতে আসতো তখন মেয়েটিকে ব্যাটমিন্টন খেলতে দেখেছে বাসার সামনে কিন্তু ইমন খেয়াল করেনি ।

ইমন সবসময়ই পরিপাটি হয়ে চলাফেরা করতো । একদিন নাকি ইমনের প্যান্টে কিছু একটা লেগে থাকতে দেখেছিলো(কালো জর্জেট প্যান্টের কারণে সহজেই চোখে পড়েছে) হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণোচ্ছ্বল এই মেয়েটি - এজন্যই ইমনের সঙ্গে এমন কান্ডটা করেছিলো !!!

সু-কেশী,পরিপাটি পোশাকের নমনীয়তা আর লজ্জা মাখা হাসিই বলে দিবে কোন স্বশিক্ষিত মায়ের আদর্শে বড় হয়েছে মেয়েটি ।আদর করে যার  নাম রেখেছিলো - "ফারজানা ইয়াসমিন বৃষ্টি "

এরপর থেকেই ইমন অনুসরন করতে থাকে বৃষ্টির গতিবিধি । আকাশের কান্না যাকে আমরা বৃষ্টি বলি.. সেই বৃষ্টি হলেই তাকে দেখা যেত ছাদে বৃষ্টি স্নানে ! 

যেটা ইমনের মেস থেকে সবসময়ই দেখা যেত । একদিন বৃষ্টির সময় ইমন বাইরে বের হয়েছে তখন দেখলো যে,ছাত্রীর সঙ্গে বৃষ্টি ছাদের উপরে ভিজতেছে ।সুম্মার হাত ইশারার

টানে কি এক আনমনে অনুভূতিতে ইমন ছুটে গেল ইসলাম ভিলায় বৃষ্টি ও ছাত্রীর সঙ্গে ভিজতে ! এ এক অজানা অনুভূতি, অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করলো তিনটি চঞ্চল মনের মধ্যে ।

এই বৃষ্টিই যে একদিন চোখের জল হয়ে ঝরবে-এটা তখন কি জানতো ইমন..?

 এভাবেই কথা গড়িয়ে রূপ নেয় ভালোলাগায় এবং পরিশেষে ভালোবাসায় !

বৃষ্টির চোখে ইমনের মতো সরল ছেলে পৃথিবীতে অপ্রতুল আবার

ইমনের দৃষ্টিতে জন্মগত ভাবে বাংলাদেশের রাজধানীতে থাকা সত্ত্বেও এমন ভালো মেয়ে পাওয়াটা দুরূহ ব্যাপার !

আজকাল ইমনের কি যে হয়েছে ...মাথায় সারাক্ষণ বৃষ্টির গান -"বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর..

ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা.. ইত্যাদি অথচ ইমন অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে.. বৃষ্টি আগামীতে এস,এস,সি পরীক্ষার্থী ! ইমনের বিয়ে করতে হলে মাস্টার্স শেষ করতে হবে, চাকরি করতে হবে আরো কত কি .!!!. ইমনের জীবনে অনেক স্বপ্ন  - প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে !!!

কিন্তু বৃষ্টি..!

সে তো ইমনের সত্ত্বার সাথে মিশে রয়েছে ।

অপরদিকে বৃষ্টিরও একই অবস্থা ! লেখাপড়ায় চিরদিন ভালো করে আসা মেয়েটি হঠাৎই উদাসীন, কিছুই ভালো লাগে না । শুধু ইমনের চিন্তা !

যথারীতি এস,এস,সি পরীক্ষা হলো প্রত্যাশিত ভালো ফলাফল না হলেও রেজাল্ট নিয়ে সকলেই 

খুশি ! এদিকে ইমন অনার্স শেষ করে চাকরির সুবাদে চলে যায় অন্যত্র । বৃষ্টির ফোন না থাকায় মোবাইলে যোগাযোগ ছিলো না।

কিন্তু তারবিহীন মনের বেতার তরঙ্গে ঢেউ খেলে যেত বৃষ্টি নামক স্বপ্নের 'রাজরানী' !

ইমন বিহীন বৃষ্টি দিনদিন শুকিয়ে কাঠ হওয়ার মতো অবস্থা ! 

যে কেশের বন্যায় প্রজাপতি খেলা করতো সে চুল আজ উষ্ক..!

যে হাসিতে ভূবন হাসিয়ে যেত সে হাসিতে আজ শুধু নীরবতা !

বৃষ্টিদের পৈতৃক ভিটা নোয়াখালী।আগেই ঠিক করে রাখা স্ব-পরিবারে ইতালী প্রবাসী

চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে আগামী শুক্রবার ! এখন কি করে ইমনকে জানাবে বৃষ্টি ?

কোন এক মাধ্যমে নাম্বার সংগ্রহ করলেও সেটা বন্ধ পাওয়া যায়।

মঙ্গল পেরিয়ে বুধ, বৃহস্পতি..

আজ শুক্রবার। বৃষ্টির বিয়ে উপলক্ষ্যে সব আয়োজন সম্পন্ন।

শুধু বৃষ্টির নিজের কোন আয়োজন নেই ।

বিয়ে,বাসর,মধূচন্দ্রিমা সবই হলো কিন্তু বৃষ্টির ভাবনায় থাকা পঙ্খীরাজের ঘোড়ায় চড়ে রাজপুত্র এলো না । আগামীকাল ইতালিতে চলে যেতে হবে কাগজপত্র সব প্রস্তুত ।

আজ রাতেই ইমন ঢাকায় এসেছে বৃষ্টিকে একটা ফোন কিনে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কিন্তু এ আজব নিউজ শোনার পর থেকেই সে জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় পড়ে আছে কিছু খায়নি । ভাবনায় শুধু একটি কথাই - "কেন এমন হলো"..?

আকাশ-বাতাস , পৃথিবী সব বিষবাস্পে ভরে উঠেছে ইমনের ।

কার জন্য পৃথিবীতে বাঁচবো-এটাই একটা বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে .!!!

সকালে সেই পুরনো ছাদে যেতে মন চাইলো ইমনের,,, বন্ধুদের নিষেধ সত্ত্বেও সে বৃষ্টিদের ছাদে গেল কিন্তু বৃষ্টিদের ফ্ল্যাটের সামনে আসতেই সেই চেনা মুখ..

সেই হাসিমাখা মুখটি মুহূর্তেই নোনা কান্নার জলে ভিজে গেল ।

অনুভূতি হীন মৃত মানুষের মতোই ইমন দাঁড়িয়ে রইলো কোন কথা বলার আগেই কাঁদতে কাঁদতে বৃষ্টি ভিতরে চলে গেল । ইমন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না পড়ে যাওয়ার পূর্বেই আনমনা মনে বেলকুনীর গ্রীল ধরে রেখেছে চোখেমুখে রাজ্যের আঁধার ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছে না..

কিছুক্ষণ পরে সম্বিত ফিরে পেয়ে ইমন মেসে বন্ধুদের কাছে ফিরে গেল ! আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বামীসহ বৃষ্টির ফ্লাইট ।

কোনমতেই শোয়া থেকে উঠতে পারছে না ইমন,

বন্ধুরা ধরে বাইরে চেয়ারে এনে বসিয়েছে কিন্তু যেটা খাওয়াতে চাচ্ছে শুধু বমি হয়ে

বের হয়ে যাচ্ছে ।

অপরদিকের ছাদ থেকে বৃষ্টি সবই দেখেছে।এমনেতেই মানসিক ভাবে ফুলদানিতে রাখা শুকনো ফুলের মতোই ভঙ্গুর অবস্থায় আছে আবার বন্ধুরা ধরাধরি করে ইমনকে বাইরে বসিয়ে দেওয়ার ঘটনা 

দেখার পরে ইমন মাথা তুলে বৃষ্টিকে দেখতে পেয়ে এমন ভাবে তাকিয়েছে যেমন ভাবে ফাঁসির আসামির শেষ ইচ্ছা পূরণে যেভাবে তাকায় ।

ভারসাম্য হারিয়ে বৃষ্টি ছাদেই পড়ে যায় বড় করে দেয়াল বেষ্টনী থাকায় বড় কোন অঘটন ঘটেনি ।

বন্ধুরা ইমনকে রেডি করিয়েছে জুম্মার নামাজের জন্য ! ইমন নামাজে গেল ওদিকে বৃষ্টির আম্মা বৃষ্টিকে না পেয়ে ছাদে গিয়ে দেখে 

বৃষ্টি অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে । উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সন্ধ্যা ৭ টার ফ্লাইটে দূর্বল অবস্থায় যেতে চাইছে না বৃষ্টি তারপরও এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসেছে বৃষ্টির স্বামী ! 

চোখের জলে বুক ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টির,,

 হৃদয়ের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা চাপা ক্ষোভে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে ফোঁটা ফোঁটা রক্তকনিকা কালচে রং ধারন করেছে । বিষাক্ত এই রক্ত শরীরের সকল টিস্যুকে মূহুর্তেই অকেজো করে দিচ্ছে!

বৃষ্টি ভাবলো শেষ বারের জন্য বিধাতার কাছে প্রার্থনা করে যাই - "আমার ইমন যেন ভালো থাকে "...

নামাজে বসে সিজদারত অবস্থায়ই এই জনমের সকল চাওয়া-পাওয়ার হিসেব চুকিয়ে অশান্তময় এই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে

মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো বৃষ্টি !!!!

সে কি অমর প্রেম..!!!

খবরটা শুনেই অসুস্থ্য ইমন মিনি স্ট্রোক করে প্রথমে জাতীয় হৃদরোগে ও পরে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ায় মেন্টাল হসপিটালে সু-দীর্ঘ দেড় বছরের ট্রিটমেন্টে কিছুটা সুস্থ্য হয়ে শুধু একটি কথাই স্পষ্ট বলতে পারে - "আমার বৃষ্টি কোথায়,

তোমরা আমার বৃষ্টিকে

এনে দিবে"..?

সেই থেকে আজও পর্যন্ত একটি যপনাই শোনা যায় !

চোখের জলে আজো ভাসে..

কবিতা আজও আছে হৃদয়পটে ...

হৃদয়ে আঁকা ছবিও আছে..

কিন্তু ছবির মানুষটিই নেই..


এই ভাবনায়-ই দিবস ও রজনী কেটে যায় পাগলপ্রায় ইমনের...

বিনোদন এর আরও খবর: