একটি স্মৃতিচারণ--
এম আব্দুল করিম, সিলেট জেলা প্রতিনিধিঃ আজ থেকে প্রায় ২২ বছর আগে ১৯৯৮ সালের কোন এক দিনে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আল-আজম দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে এসেছিলেন মরহুম এই জননেতা। তখন আমি ক্লাস সিক্সের ছাত্র।আমি স্কলারশিপ পেয়েছিলা এবং স্কুলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি আমার গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন। যা আমার জীবনে ছিল পরম পাওয়া।ইতিহাসের কিংবদন্তি এই নেতার আজ ১৫তম মৃত্যু বার্ষিকী। অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সহসাই আজ অশ্রুভারাক্রান্ত মনে কত স্মৃতি ভাসছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী,আমার রাজনৈতিক গুরু,বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা, মরহুম জননেতা আবদুস সামাদ আজাদ সাহেবর আজ (২৭ এপ্রিল) ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৫ সালের এই দিনে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অনন্তকালের দিকে চলে যান।
""ইতিহাসের এই কিংবদন্তি জননেতার সামান্য পরিচিত আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম""
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇
মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ ১৯২২ সালের ১৫ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ভুরাখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালে সুনামগঞ্জ জেলা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৪৬ সালে একই সংগঠনের অবিভক্ত আসামের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে উনার সিদ্বান্ত অনুযায়ী সর্বপ্রথম ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট থেকে এমএলএ নির্বাচিত হন এবং আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং সর্বদলীয় রাজনৈতিক জোট "এনডিএফ" এর দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে এমএলএ নির্বাচিত হন।তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠকদের একজন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের এবং ১৯৯৬ এর জনতার মঞ্চের অন্যতম রূপকার ছিলেন মরহুম এই জননেতা। তিনি ১৯৯১ সালে বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভায় সফল পররাষ্টমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বৃটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বৈরাচারের রোষানলে পড়ে জীবনের বহু বছর তিনি কারাবন্দি ছিলেন। উনার জীবনের শেষ নির্বাচন হলো ২০০১ সালের ১লা অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন।এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারলেও আব্দুস সামাদ আজাদ সুনামগঞ্জ-৩ আসনে বিজয়ী হন। অবশেষে অসংখ্য ভক্ত ও শুভাকাঙ্খী কে চোখের জলে ভাসিয়ে ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।মহান আল্লাহ তায়ালা আমার প্রিয় পরম শ্রদ্ধেয় এই নেতাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা হিসেবে যেন কবুল করে নেন,,আজকের এই দিনে এটাই কামনা করি।
----------------- আমিন।