পদ্মায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা বাণিজ্য
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদী "ভাঙন এলাকায়" থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। প্রতিদিন এই অবৈধ ড্রেজার থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে চক্রটি। দিনশেষে
ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন ওই প্রভাবশালী চক্রের একাধিক সদস্যরা। আর এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ধুলশুড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের নেতা মিজানুর রহমান। নিরাপত্তা হিসেবে রাখা হয়েছে বিশাল ক্যাডার বাহিনী।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অপকর্মে মদদ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন এবং নৌ পুলিশের দাবী স্থানীয়দের। দীর্ঘদিন ধরে "ইজারাকৃত স্থানের" সীমানার বাহিরে গিয়ে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী চক্রটি। স্থানীয় প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় প্রতিদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলছে বালুখেকোরা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নদীরক্ষা বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ধর্মীয় অবকাঠামো। তবুও ঝুকিপূর্ণ স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আর এই অবৈধ বালু উত্তোলন অপকর্মে হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক এক প্রভাবশালী নেতা এবং স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতার প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষভাবে মদদ রয়েছে।
অনুসন্ধ্যানে জানাগেছে, চলতি বছরে গত ৭মে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ বালুমহালের ইজারা নেন ফরিদপুর জেলার মিথিলা এন্টারপ্রাইজ। গত ২৯ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বালুমহালের নির্ধারিত সীমানা এবং দখল বুঝিয়ে দিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ডকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত বালুমহালের সীমানা অতিক্রম করে প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরত্বে এসে বালু উত্তোলন করছে মিথিলা এন্টারপ্রাইজ। স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপির নেতাদের দাপটে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ইজারাদার অধিক মুনাফার আশায় নির্ধারিত বালুমহালের বাহিরে এসে বালু উত্তোলন করছে। কারণ ইজারাকৃত স্থানে রয়েছে ভিটি বালু। যার প্রতি বর্গফুটের দাম ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা। ইজারাবহিভূর্ত স্থানে রয়েছে কনস্ট্রাকশন বালু। যার বর্গফুটের দাম ২ টাকা থেকে ৩ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। ইজারাদার নিজের পকেট ভারী করতে ইজারাকৃত স্থান রেখে নদী ভাঙন কবলিত স্থানে এসে বালু উত্তোলন করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হরিরামপুর উপজেলার ধুলশুড়া ইউনিয়নের আলিয়ানগর সিমানার মধ্যে পদ্মা নদী থেকে ১০ টি কাটার মেশিন (ড্রেজার খননযন্ত্র) দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। নদী রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে ধুলশুড়া ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকায় বাল্বহেডের সিরিয়ালের জন্য টিকিট ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিদিন শতশত বাল্বহেড সিরিয়ালের টিকিট নেয়ার জন্য নদী রক্ষা বাঁধের উপর বাল্বহেড থামিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছে। এতে নদী রক্ষা বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কাজে কেউ যেন বাধা সৃষ্টি করতে না পারে সেইজন্য নদীপাড়ে বিশাল ক্যাডার বাহিনী রাখা হয়েছে। এবং নদীতে তাদের নিজস্ব স্পিডবোট রয়েছে। সেই স্পিডবোট দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন কাজের নজরধারী রাখা হয়। প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে শতশত বালুবাহী বাল্বহেড দিয়ে বালু বিক্রি হচ্ছে।
হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ বলেন, দুঃখের কথা কি আর বলব ভাই , আসলে আমাদের ডিসি সাব ওই ইউএনও সাব বসে ভাগ পায় তো ।এদের তো কোন নিয়ম-নীতি নাই । লেছড়াগঞ্জে যে বালুমহাল দিছে সেখান থেকে তো বালু উত্তোলন করে না,তার ধারের কাছে নাই । এরা পদ্মা জুরে বালু কাটে, ধুলশুরা থেকে কাটে বেশি এবং কাটতে কাটতে আমাদের কাঞ্চনপুর পর্যন্ত আসে । আমরা কত মানববন্ধন করলাম, কত প্রতিবাদ করলাম ডিসিকে মানা করলাম তবুও তিনি ইজারা দিয়ে দিয়েছে। গতবার দিয়েছিল ১১ কোটি টাকায় একই বালু মহাল এবার দিয়েছে ৫ কোটি টাকায়। এগুলো দেখবে কে?এই মাটি কাটার কারণে নদী ভেঙ্গে যাচ্ছে । সরকার শত শত কোটি টাকা খরচ করে জিও ব্যাগ ফালাচ্ছে । উনি তো বলবে সরকার ৫ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে! আরে ভাই রাজস্ব দিয়ে কি করবো? এলাকা ভেঙে যাচ্ছে, বসতবাড়ি হারাচ্ছে মানুষ, সরকারের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে এই বালু কাটার কারনে এদিকে খেয়াল নাই অথচ পাঁচ কোটি টাকার রাজস্ব নিয়ে আছে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় আমাদের কাঞ্চনপুর এলাকার ১৩টি মৌজা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী পারের শতশত মানুষ ভিটাবাড়ি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছে। নদী পারের মানুষের দূর্দশা চিন্তা করে আমি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেছিলাম। হরিরামপুর এলাকায় যেন বালুমহাল ইজারা না দেয়া হয়।
ধুলশুড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের নেতা মিজানুর রহমান খান যুগান্তরকে বলেন, আমি ইজারাদারের পক্ষে কাজ করি। ইজারাকৃত স্থান থেকেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। শুধুমাত্র বাল্বহেডের সিরিয়ালের জন্য ধুলশুড়া এলাকায় টোকেন ঘর করা হয়েছে। এখান থেকে বাল্বহেড শুধু টোকেন নেয়।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কহিনুর আক্তার বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের এসিল্যান্ড বালুমহালের সিমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইজারাকৃত স্থানের বাহিরে গিয়ে বালু উত্তোলন করার কোন সুযোগ নেই। আমরা খুব শ্রীঘ্রই ব্যবস্থা নিব।
ফরিদপুর অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বালুমহালের সিমানার বাহিরে গিয়ে যদি কেউ বালু উত্তোলন করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের সাথে কারো কোন সখ্যতা নেই।আগেও আমরা অভিযান করে মামলা দিয়েছি।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড: মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ইজারাকৃত স্থানের বাহিরে গিয়ে বালু উত্তোলন করা হলে আমরা ব্যবস্থা নিব।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
মো: আরিফুর রহমান অরি