চতুর্থ বারের মত যশোর সরকারি মুরগি খামারে বাটফ্লু শনাক্ত হওয়ায় সর্বত্র সতকর্তা।

মনা যশোর প্রতিনিধিঃ
চতুর্থ বারের মত যশোর সরকারি মুরগি ও উন্নয়ন খামারে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় দেশের সব হাঁস মুরগি ও প্রজনন ও উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোকে কঠোর সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বেসরকারি খামারগুলোকেও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। দেয়া হয়েছে বিশেষ দিক নির্দেশনাও। তবে বার বার কেনো আক্রান্ত হচ্ছে তা তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
যশোর প্রজনন খামরাকে আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সেখানে মুরগি পালন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে জীবানু ধ্বংস করা মেডিসিন প্রয়োগ করে জীবানু মুক্ত ও জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া কোনোভাবেই যাতে সংক্রমিত হতে না পারে সে পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানের উপ পরিচালক কৃষিবিদ বখতিয়ার হোসেন জানিয়েছেন, যশোর খামারে সহসা আর মুরগি উৎপাদন করা সম্ভব হবে না।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর থেকে তথ্য মিলেছে, গত ১২ মার্চ খামারে একবারে অনেকগুলো মুরগি মারা যাওয়ায় নমুনা ঢাকার ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ হলে ১৩ মার্চ খামারের ৬টি শেডের দুই সহস্রাধিক মুরগি মেরে পুতে ফেলা হয়। একই সাথে শেড খালি করে পরিস্কার ও জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করা হয়েছে। আতংকিত না হয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে প্রাণি সম্পদ বিভাগ। গত ১৩ মার্চ ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার পর খামারের ৬টি শেডের দুই হাজার ৭৮টি মুরগি মেরে পুতে ফেলা হয়েছে।
যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার থেকে তথ্য মিলেছে, বর্তমানে খামারে কোন মুরগি নেই। শেডগুলো খালি করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করা হয়েছে। খামারিদের আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, সরকারি খামারের বাইরে ময়লা ফেলার জায়গা আছে। এছাড়া খামারে পাখির আনাগোনা থাকে। এসব মাধ্যমে বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়াতে পারে।
এদিকে ঢাকাতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডক্টর আবু সুফিয়ান মিডিয়াকে জানান, গত ১২ মার্চ যশোরের সরকারি খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরেও পাঠানো হবে। তাৎক্ষনিকভাবে ওই খামারকে বিশেষ নির্দেশনার আওতায় আনা হয়েছে। সব খামারিদের সংগঠনকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যাতে তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ভ্যাকসিন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করেন। সংক্রমন যাতে কোনো রকমে আর না বাড়ে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। সরকারি সব খামারও সতর্ক অবস্থানে রাখা হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি খামারগুলোকেও দিক দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে ইতিমধ্যে।
এদিকে প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর যশোর জেলা কার্যালয় সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, যশোরের শংকরপুরে অবস্থিত সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে এবার দিয়ে ৪ বার বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ বার্ড ফ্লুর ভাইরাস ‘এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ’তে আক্রান্ত হয়ে খামারের ৩/৪টি মুরগি মারা যায়। এর দু’দিন পর একটি টিন সেডের আরও ৩শ’৯৩টি মুরগি আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ওই সময় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা মুরগি আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার বিষয়টি অধিদপ্তরের উপরমহলসহ যশোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করলে খামারের মুরগি, ডিম, খাবার ও ভিটামিন পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া অধিকতর পরীক্ষার জন্য কয়েকটি মরা মুরগির নমুনা (স্যাম্পল) মহাখালিস্থ সেন্ট্রাল ডিজিজ ইনভেস্টিগেশন ল্যাবে পাঠানো হয়।এরপর ওই বছরের ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে পজিটিভ রিপোর্ট আসে। আর পরদিন ২৭ মার্চ রাতে বিভাগীয় ডাক্তার মেহেদি হাসান, ডাক্তার সমর ঘোষ এবং জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের তত্ত্বাবধানে খামারে থাকা ৬ হাজার ৮৬৮ টি মুরগি, ১৮শ’ ৮২টি মুরগির ডিম, ১৩ শ’ কেজি মুরগির খাবার এবং ১৯ কেজি ভিটামিন ধ্বংস করা হয়। ওই সময় প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর থেকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত টিম বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি কারণ নিরূপন করে। একইসাথে ওই সময় খামারে কর্মরত ছয় জন স্টাফকে অন্যত্র শাস্তিমূলক বদলিও করা হয়। সরকারের প্রায় কোটি টাকার মুরগি ধ্বংস ও সরকারের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণে ওই খামারকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ছয় মাস পর্যন্ত সেখানে মুরগি পালন বন্ধ রেখে পরিস্কার পরিছন্নতার কাজ, জীবানু ধ্বংস করা মেডিসিন প্রয়োগ করে জীবানু মুক্ত ও জীব নিরাপত্তা নিশ্চত হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ওই সূত্রটি আরো জানিয়েছে, এর আগে ২০০৮ ও ২০১২ সালে আরো দুবার খামারটি বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হয়। এরারে ২৫ সালের বাড্র্ফ্লু মিলিয়ে ৪ বার সরকার বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হলো। কোন কারণে এ খামারটি বার বার আক্রান্ত হচ্ছে সে ব্যাপারে জোরালো তদন্ত জরুরি বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হক গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, আতংকের কোনো কারন নেই। যশোর সরকারি খামারের সব মুরগি পুতে ফেলা হয়েছে। শেড গুলোও এখন নিরাপদ। এখন বেসরকারি পর্যায়ের খামারগুলোকে সতর্ক করা হচ্ছে, বাজারও মনিটরিং করা হচ্ছে। খামারিদের সচেতন করা হচেছ, যাতে সংক্রমন আর না বােেড়। এছাড়া ভয়ের কোনো কারণ নেই। এজন্য যে এদেশের মানুষ ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মাংস রান্না করে খায়। আর ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এ ধরণের জিবানু ধ্বংস হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে প্রজনন খামারের উপ পরিচালক কৃষিবিদ বখতিয়ার হোসেন জানিয়েছেন, খামারে সহসা মুরগি পালন শুরু হচ্ছে না। খামারে নানা সমস্যা আছে, কি কি কারণে খামারে বার্ডফ্লু আক্রান্ত হচ্ছে তা সনাক্ত করার কাজ চলছে। আর ওইসব সমস্যা সমাধানের কাজ আগে করা হবে।
সীমান্তবর্তী জেলা যশোর। সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের মতো না। বার্ড ফ্লু নিয়ে যেন অনাকাঙিখত ভুল বোঝাবুঝি বা প্রচারণা না ছড়ায়, সেদিকে যেন আমরা সতর্ক থাকি। খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জিবানু ধ্বংস হওয়ার পরও সহসা এই খামারটিতে উৎপাদন করা যাবে না। আরো কিছু ধাপ পরে অধিদপ্তরের নির্দেশনার পরই নতুন করে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উ