গাজীপুরে চাঁদাবাজি নয়, ছিল এনজিও কর্মীর পাওনা টাকার সালিশ: ১০ জন আটক, পরে আপোষে মুক্ত

 প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ০৮:০৯ অপরাহ্ন   |   অপরাধ ও আইন


স্টাফ রিপোর্টার (গাজীপুর) 

গাজীপুর মহানগরের পোড়াবাড়ী এলাকায় ‘চাঁদাবাজি অভিযোগে আটক ছাত্রদল ও যুবদল সংশ্লিষ্ট ১০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগটি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। রোববার (১১ মে) দুপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হওয়া এসব নেতাকর্মীকে রাতেই গাজীপুর সদর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনাটি এখন আলোচনার কেন্দ্রে, কারণ এটি যে প্রকৃতপক্ষে এক এনজিও কর্মীর পাওনা টাকা আদায়ের বিষয় ছিল, তা একটি লিখিত আপোষনামায় স্বীকার করেছেন বাদী পক্ষ নিজেই।

পুলিশ জানায়, গাজীপুর নগরের হংকং ফিলিং স্টেশনের বিপরীত পাশে সৃজনী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অফিসে গিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক সোহেল রানার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকির অভিযোগে ১০ জনকে আটক করা হয়। পরে জানা যায়, বিষয়টি ছিল এনজিও কর্মী শাহিন মিয়ার পাওনা টাকা সংক্রান্ত।

জানা যায়, এনজিও মালিক মহিবুল আলম পূর্বে তার কর্মী হিসেবে দায়িত্বে থাকা শাহিন মিয়ার কাছ থেকে সিকিউরিটি বাবদ একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে চাকরি ছাড়ার পর সেই চেকে ১০ লাখ টাকা বসিয়ে আদালতে মামলা করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে শাহিন মিয়া এক রাজনৈতিক আত্মীয়ের মাধ্যমে স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের ডেকে সালিশি সভার আয়োজন করেন।

ঘটনাস্থলে সালিশ চলাকালে এনজিও মালিকের ভাই, এক সেনা কর্মকর্তা, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর একটি দল নিয়ে এসে কাউকে কিছু না জানিয়ে ওই ১০ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

মিডিয়ায় তাৎক্ষণিক ‘চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংবাদ প্রকাশের পর বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার চাপ দেখা দেয়। পরে তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে থানা থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আটককৃত সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।


এদিকে, আপোষনামায় বাদী মহিবুল আলম স্বীকার করেন, ঘটনাটি ছিল ‘ভুল বুঝাবুঝিথ। বিবাদী শাহিন মিয়ার কাছ থেকে নগদ ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন এবং বাকি ৫ লাখ টাকা ২৯ জুনের মধ্যে পরিশোধে সমঝোতায় পৌঁছেছেন তারা। এছাড়া বাদী মামলা প্রত্যাহার করবেন এবং আর কোনো হয়রানি করা হবে না মর্মে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন।


এএ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, “চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। এটা রাজনৈতিকভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের হেয় করার অপপ্রয়াস। সত্য যাচাই ছাড়া সংবাদ প্রকাশ করায় আমাদের সম্মান ও কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।


গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর বলেন, “আমরা সালিশে মধ্যস্থতা করছিলাম মাত্র। বিষয়টি ভুল বুঝাবুঝি থেকে এমন জায়গায় পৌঁছায়। তবে শেষপর্যন্ত সত্য উদঘাটিত হয়েছে এবং আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি মিলেছে।


গাজীপুর সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, “তদন্তে চাঁদাবাজির কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনাটি নিছক পাওনা টাকার সালিশি সভা ছিল এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ অপ্রয়োজনীয় ছিল।


অপরাধ ও আইন এর আরও খবর: