গাজীপুর বিআরটিএ প্রতিদিন ঘুষ বাণিজ্য এক সহ: পরিদর্শকের নিয়ন্ত্রাণে

রাজু হোসেন (গাজীপুর জেলা) প্রতিনিধি
গাজীপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দুর্নীতির আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য চলে এ যেন দেখার কেউ নেই। আর এসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সহকারী মোটরযান পরিদর্শক গোলাম সারোয়ার।
প্রতি গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করতে ৪ হাজার, গাড়ি ও মালিক ছাড়া মালিকানা পরিবর্তন করতে ২০ হাজার, মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করতে ২ হাজার, ফিটনেস করতে ১ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে থাকে এই অসৎ এই কর্মকর্তা। সোলেমান, জিন্নাত, আহমদ, কাজল, রাজ্জাক, সাত্তার, মনির, জাহাঙ্গীর, শাহীন, মফিজসহ আরো নাম না জানা আরো দালালের মাধ্যমেই উপার্জিত ঘুষের টাকা বিভিন্ন লেভেলের কর্মকর্তাসহ হলুদ সাংবাদিকদের কাছে চলে যায়। ঘুষ খেয়ে মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এ যেন এক গণেশের কেরামতি খেলা। বস্তুত বিআরটিএ কার্যালয়ের পরতে পরতেই ঘুষ। দালালচক্রের মাধ্যমে প্রতিটি কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রেটে ঘুষ আদায় করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার(২৪ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, ঘুষ দিয়েই ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়া যায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির। সহকারী মোটরযান পরিদর্শক সারোয়ার তার দালালদের সাথে নিয়ে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করছেন। দেখা মিলে গাড়ির চালকরা দালালের সাথে গোপনে লেনদেন করছে। সারোয়ারের পাশেই দাড়িয়ে আছে।
আরো জানা যায়, সহকারী পরিদর্শক সারোয়ার অফিস সহকারী পদে চাকরিতে যোগদান করে। বিআরটিএর আলোচিত কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আত্মীয় মাসুদের শালিকার স্বামী হওয়ার সুবাদে সারোয়ার যেখানে যান, সেখানেই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুর্নীতি চালিয়ে যান। সেই সাথে সহকারী মোটরযান পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেয়ে
টাঙ্গাইল বিআরটিএ অফিসে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগে শাস্তি মূলক গাজীপুরে বদলি হয়ে আসার পর থেকেই তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
মালিকানা পরিবর্তন করার বিষয়ে গোপনে সারোয়ারের দালাল রাজ্জাকের কাছে জানতে চাইলে সে বলেন, মালিকানা পরিবর্তনের জন্য সারোয়ার স্যারকে ৩ হাজার ৫ শত ও ফাইল বের করা বাবদ ৫ শ টাকা করে দেওয়া লাগে।
দালালদের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালিত হয়। কিছুদিন পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো থাকে; তারপর আবার সবকিছু আগের মতো।
এর কারণ দালালদের তৎপরতা চলে বিআরটিএ’র এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে। মূলত তারাই দালালদের পৃষ্ঠপোষক। তাই বন্ধ হয় না বিআরটিএ কার্যালয়ের দুর্নীতি এবং দালালদের অপতৎপরতা। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য চলে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি। অদক্ষ চালক লাইসেন্স পেয়ে গাড়ি চালালে অথবা সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চললে এর পরিণতি কী হতে পারে, তা সবার জানা। বস্তুত এসব কারণেই দেশে সড়ক দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
তাই সরকারের উচিত এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং বিআরটিএ কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা করা। তবে সেক্ষেত্রে দেখতে হবে শর্ষের ভেতরেই যেন ভূত না থাকে। অর্থাৎ নজরদারির দায়িত্ব যাদের দেওয়া হবে, তারাও যেন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে না পড়ে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিজেদের দুর্নীতিমুক্ত রাখতে পারলে নিম্নপর্যায়ের দুর্নীতিও রোধ করা সম্ভব। মুশকিল হচ্ছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘুষের লোভ সংবরণ করতে পারেন না। তাই আশকারা পায় অধিস্তনরা, গজিয়ে ওঠে দালালচক্র। সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয় তথা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় যদি বিআরটিএ’র দুর্নীতি রোধে আন্তরিক হয়, একমাত্র তাতেই মিলতে পারে সুফল।
এবিষয়ে অভিযুক্ত বিআরটিএ সহকারী মোটরযান পরিদর্শক গোলাম সারোয়ারকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও উনি ফোন রিসিভ করে নি।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করলে উনি জানান, গোলাম সারোয়ারের বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।