তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের ডাক দিয়েছে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা।

 প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৭ অপরাহ্ন   |   জাতীয়




মনা,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

তরুণ স্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করার আহ্বান জানিয়েছে আইডিয়াল স্কুল এণ্ড কলেজ, মতিঝিল-এর তরুণ রেড ক্রিসেন্ট এর সদস্যরা । শনিবার (২৫ জানুয়ারি) নারী মৈত্রীর আয়োজনে তামাক বিরোধী এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান তারা। 


সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইডিয়াল স্কুল এবং কলেজ, মতিঝিল এর অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ এমাম হোসেইন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তামাক বিরোধী মায়েদের ফোরামের আহ্বায়ক শিবানী ভট্ট্যাচার্য। 


অনুষ্ঠানের বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রজেক্ট কো–অর্ডিনেটর নাসরিন আক্তার। তিনি বলেন,প্রতিবছর তামাক সেবনের কারণে বাংলাদেশে ১ লক্ষ ৬১ হাজার জন মানুষ প্রাণ হারান। এই মর্মান্তিক পরিসংখ্যান আমাদের জনস্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে এক গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে। যদিও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, তবুও ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম মান অর্জনে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। 


তিনি আরও বলেন, এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যে সংশোধনী গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬ সংশোধনীর প্রতি বিশেষ নজরদারি করে দ্রুত পাস এবং কার্যকর করা অতি জরুরি। এর মধ্যে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের আমদানি-উৎপাদন-ব্যবহার ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির যেকোনও ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০-৯০ শতাংশ বাড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সংশোধনীগুলো দ্রুত পাস করা হলে, আমরা তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে এবং তাদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবো।


বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো জরিপ’ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক গভীর সংকেত। এ অবস্থায় তামাকের ভয়াবহতা থেকে তরুণদের রক্ষা এবং তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার আহ্বান জানান তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরামের আহ্বায়ক শিবানী ভট্ট্যাচার্য।


তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "নিজেদের কণ্ঠস্বর বলিষ্ঠ করতে হবে। তামাকবিরোধী আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে হবে। মন্ত্রীপরিষদের সামনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীগুলো পাসের দাবি জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে।"


তরুণ রেড ক্রিসেন্ট এর প্রেসিডেন্ট নাশিতা হাসান বলেন, ‘‘বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাই বয়সে তরুণ। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রথম টর্গেট এই কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠি। এখনই সময় তাদের এই অপতৎপরতা প্রতিহত করার। সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের তামাক থেকে দূরে থাকা দরকার। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের জন্য রেড ক্রিসেন্ট এর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানান তিনি। 


মোহাম্মদ এমাম হোসেইন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন একটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা লাভ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কলেজের আশপাশে সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের বিক্রি বন্ধে আমরা কঠোর নজরদারি করব। এছাড়াও তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন প্রলোভন তরুণ সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে নিয়মিত প্রচারণা এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করব।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার জোর দাবি জানান তিনি।

জাতীয় এর আরও খবর: