বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেই কি তি নি এতটা মানবিক? পর্ব ২

অবশেষে সকল বাধা উপেক্ষা করে ৮১ সালের সম্মেলনে আওয়ামীলীগ সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৭ ই মে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলায় পদার্পণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। লাখো জনতার ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন। কিন্তু শাসকের নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা এবং অমানবিকতা প্রত্যক্ষ করেছেন; হয়েছেন বেদনাসিক্ত। ধানমন্ডি-৩২ এর বাসভবনে প্রবেশ করতে পারেননি অবৈধ শাসকের বাধায়। ৩২ নম্বরের বাসায় সেদিন লম্বা তালা ঝুলেছিল সরকারের ইশারায়। জেনারেল জিয়ার পর আরেক অবৈধ শাসক জেনারেল এরশাদের শাসনামল ও ছিল মূদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। এরশাদের ছত্রছায়ায় বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিরা ফ্রিডম পার্টি নামক রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এদেশে এমপি হয়েছেন এরশাদের দয়ায়, খালেদা জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। পিতা, মাতা হত্যার বিচার তো পাননি, উল্টো খুনিদের বারবার পুরস্কৃত হতে দেখেছেন। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে কিন্তু ধৈর্য্য হারাননি। সুদিনের জন্য অপেক্ষা করেছেন, অপশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে সংগ্রাম করেছেন। গৃহবন্দি হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন; কিন্তু অন্যায়ের সাথে, অবৈধ শাসকদের সাথে আপোষ করেননি।
দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামীলীগকে কৌশলে বন্দুকের নলের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে দেয়নি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকেরা। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ৯৬ সালে জনগণের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হন শেখ হাসিনা। ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে স্বপরিবারে জাতির পিতা হত্যার বিচার শুরু করেন। রাষ্ট্রের স্থপতিকে স্বপরিবারে হত্যার বিচার শুরু হয় নির্মম হত্যাকান্ডের ২১ বছর পর! শুরু হয় কারা অভ্যন্তরে নির্মমভাবে নিহত চার জাতীয় নেতা হত্যার বিচার। ২০০১ সালের অক্টোবরের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে পুনরায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং জেল হত্যা মামলার বিচার কৌশলে বন্ধ করে দেন বেগম খালেদা জিয়া। চাকুরি থেকে বরখাস্ত খুনি খায়রুজ্জামানকে পুনরায় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের চাকুরিতে পুনর্বহাল করা হয়। জেল হত্যা মামলার আসামি খুনি খায়রুজ্জামানকে জামিন দেওয়া হয়। অতপর জেল হত্যা মামলার রায়ের কিছুদিন পূর্বে তাকে প্রমোশন দিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত করে পাঠায় খালেদা-নিজামীর জোট সরকার। রায়ের পূর্বে আসামিকে পুরস্কৃত করে সরকারের মনোভাব আদালতকে জানিয়ে দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে ঐ মামলা থেকে খুনি খায়রুজ্জামান খালাস পান। শেখ হাসিনা এবং জাতীয় চার নেতার ছেলে-মেয়েদের সাথে বেগম খালেদা জিয়ার এর চেয়ে বড় অমানবিকতা আর কি হতে পারে?
২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট তৎকালীন খালেদা-নিজামী সরকারের মদদে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনা সহ আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে আওয়ামীলীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার পৈশাচিক মিশন গ্রহন করে খালেদা পুত্র তারেক রহমান। ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধু কন্যার কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনো তিনি কানে কম শুনেন। হেয়ার এইড দিয়ে তাকে শুনতে হয়। আইভী রহমান সহ ২৪ জন নেতাকর্মী সেদিন প্রাণ হারান। গ্রেনেডের আঘাতে পঙ্গুত্ব বরণ করেন শত শত নেতাকর্মী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক সেদিন খালেদা জিয়ার সরকারের নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসার অধিকারটুকু সেদিন গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহতরা পাননি। এটি ছিল সেদিন বেগম খালেদা জিয়ার মানবিক গণতন্ত্র! বেগম খালেদা জিয়ার এ রকম অসংখ্য অমানবিকতার উদাহরণ আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে। ১৫ ই আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের দিনে খালেদা জিয়া বড় বড় কেক কেটে মিথ্যা জন্মদিন পালনের নামে বিকৃত আনন্দ উদযাপন করেন। যে শেখ হাসিনার সাথে এত বড় অমানবিকতা দেখিয়েছেন বেগম জিয়া, কেবলমাত্র তার মানবিকতায় আজ সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েও তিনি জেলের বাইরে।
শেখ হাসিনার মানবিকতার কারনে কয়েকবার তার দন্ড স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। জেলখানায় অন্তরীণ থাকা অবস্থায় জেলকোড ভঙ্গ করে তার আবেদনের ভিত্তিতে জেলখানায় তার ব্যক্তিগত গৃহপরিচারিকা নিযুক্তির সুযোগ দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুর পর মানবতার মা শেখ হাসিনা সেদিন বেগম জিয়ার বাসায় ছুটে গিয়েছিলেন সন্তানহারা শোকসন্তপ্ত বেগম জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে। কিন্তু সেদিন বেগম জিয়ার বাসভবনে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখক হুমায়ুন আজাদ সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেনানিবাসের গেটে শেখ হাসিনার গাড়ি আটকে দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে যেতে না দেওয়া। সেদিন পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে সিএমএইচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কেবলমাত্র জিঘাংসার বশবর্তী হয়েই বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি এরুপ অমানবিকতা দেখিয়েছেন খালেদা জিয়া।
২০০১ সালের জুলাইয়ে জাতির পিতার কন্যা হিসেবে শেখ রেহানাকে ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। বেগম জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে শেখ রেহানার নামে বাড়িটির বরাদ্দ বাতিল করে বাড়িটিকে ধানমন্ডি থানা হিসেবে ঘোষণা করেন। এভাবে বারবার বেগম জিয়ার চরম প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন শেখ হাসিনার পরিবার। বিনিময়ে শেখ হাসিনা কি তেমনটি করেছেন? বিনা বিচারে একদিন ও খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ রাখেনি শেখ হাসিনার সরকার। নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে ২০১৭ সালের অক্টোবরে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানা আদালত থেকে গুলশান থানায় চার মাসেও পৌঁছেনি। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার সরকার বেগম জিয়াকে তখন গ্রেফতার করেনি। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে দন্ডিত হওয়ার পর খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হন। অসুস্থ হলে সরকারের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা সু্বিধা নিশ্চিত করেছে সরকার। পরিবারের মানবিক আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি এখন মুক্ত। বেগম জিয়া অনেকটাই অসুস্থ।