রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এক সাথে ১৭ জন কর্মকর্তার বদলী

লিয়াকত হোসেন রাজশাহীঃ রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আবারো বিভিন্ন শাখায় পদায়ন বা বদলির ঘটনা ঘটেছে। তবে, এবার পূর্বের ন্যায় দু-একজন নয়। ১৭ জন কর্মকর্তাকে একসাথে বদলী করা হয়েছে বিভিন্ন শাখাতে। এতোগুলো কর্মকর্তাকে একসাথে বদলী করনের পেছনে স্বার্থান্বেষী কোন বিষয় থাকতে পারে বলে মন্তব্য কর্মকর্তাদের। কলেজ পরিদর্শক থেকে পদোন্নতি পেয়ে চেয়ারম্যান হবার কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন শাখাতে বিশাল এই রদবদলের ঘটনা ঘটালেন নতুন দায়িত্ব নেয়া প্রফেসর হাবিবুর রহমান। এই পদায়নে বর্তমান বোর্ড সচিব মোয়াজ্জেম হোসেনসহ প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিশাল একটি স্বার্থ কাজ করছে বলেও অভিযোগ কর্মকর্তাদের।
এছাড়াও বড় পরিসরের আকস্মিক এই বদলীর পেছনে রয়েছে বিগত চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ মোট ১২ জনের নামে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর করা প্রায় সাড়ে আঠারো লাখ টাকার একটি দুর্নীতির মামলা (যার বিশেষ মামলা নং ১১/২০২০, তাং ২৩/৯/২০২০ ইং) থেকে অব্যাহতি পাওয়া ও সেই সাথে শিক্ষা বোর্ড থেকে ‘এনওসি’ (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) পাবার আশায় বর্তমান উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে বিগত সময়ের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আসামীদের যোগসাজোসে এই আকস্মিক বিশাল পরিসরের রদবদলের ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য শিক্ষা বোর্ডে কর্মরতদের।
উল্লেখ্য, উক্ত দুর্নীতির মামলা চলমানবস্থায় গেল ৯ সেপ্টেম্বর রোজ বৃহস্পতিবার নগরীর গ্রেটাররোড সোনালী ব্যাংক শাখাতে শওকত নামের এক অপরিচিত ব্যক্তি শিক্ষা বোর্ডের অন্তর্গত তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (ঊওওঘ) নাম্বার ব্যবহার করে দুর্নীতির সমপরিমাণ অর্থ জমা দিলেও অলৌকীক কারণে বিগত সময়ের বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মকবুল হোসেনকে বিষয়টি শিক্ষা বোর্ডের অর্থ, রাজস্ব ও আইটি শাখা ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবগত করেননি! গেল মাসের শেষের দিকে শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে নতুন দায়িত্ব নেওয়া কর্তাকে বিষয়টি ব্যাংক থেকে দাপ্তরিকভাবে জানানো হয়েছে চলতি ডিসেম্বর মাসের সাত তারিখ সকালে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও বোর্ডের হিসাব শাখার এই ধরণের লুকোচুরির বিষয়গুলোও বিশাল পরিসরের এই বদলী করণের বিষয়টিকে সন্দেহের দিকেই ধাবিত করছে বলে মন্তব্য বোর্ডে কর্মরতদের।
গত ৬-১২-২০২১ ইং তারিখে স্মারক নম্বর-৩৩০ (৩৭)/১ম-৮৪/সংস্থাপন (৫ম খন্ড)’র আদেশবলে ১৭ জন কর্মকর্তার পদায়ন বা বদলীর চিঠি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। যেটি কার্যকর হয়েছে পরের দিন সকাল থেকেই। এর আগে, গত ১৪-১১-২০২১ ইং তারিখে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে অন্য শাখায় বদলী করনের পরে তেমন কোন কারণ ব্যতীরেকেই মাত্র ২২ দিনের মাথায় আবারো নতুন শাখায় বদলীকরণের বিষয়টি নিয়ে সমস্ত শিক্ষা বোর্ড জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। এতো ঘনঘন বদলীর কারণে একদিকে যেমন বদলীকৃত নতুন শাখার কাজ ও দায়িত্ব সম্পর্কে বুঝে উঠতে সময়ক্ষেপন হচ্ছে, ঠিক একই কারণে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত সেবাগ্রহীতারও পড়ছেন বিপাকে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কোন কারণ ব্যতীরেকেই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এতো ঘনঘনবদলীর বিষয়টি এখন দৃষ্টিকটু হিসেবে উপস্থাপন হয়েছে সকলের সামনে।
এছাড়াও, দুদকের মামলায় বিগত বোর্ড চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সাথে আসামীর তালিকায় থাকা পাঁচজন কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়েছে নির্দিষ্ট কোন স্বার্থ হাসিলের জন্যই বলে মন্তব্য কর্মকর্তা-কর্মচারিদের। বিগত সময়ের বোর্ড চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে সদ্য বিদায় হওয়া চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মকবুল হোসেন ও সংশ্লিষ্ট অর্থ শাখা থেকে ‘এনওসি’ (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) না দেবার কারণে মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তাকে হাত করে কোনরকম কারণ ব্যতীরেকেই মেয়াদ পূর্ণের প্রায় একবছর আগেই চেয়ারম্যানকে ‘ওএসডি’ করে দেয়া এবং ঐসকল শাখার কর্মকর্তাদেরকে অন্যত্র বদলী করে তদস্থলে দেয়া হয়েছে দুদকের করা দুর্নীতির চলমান মামলার আসামীদেরকেই। বিষয়টি নিয়ে সমস্ত শিক্ষা বোর্ড জুড়ে চলছে কানাঘষা। কেউ কেউ এবিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, কয়েকমাস পূর্বে হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার উপ-পরিচালক ও বোর্ড সচিবের যোগসাজোসে পূর্বের ন্যায় সংস্থাপন শাখা থেকে অবৈধপন্থায় দাপ্তরিক গোপনীয় নথি ও অবৈধভাবে প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে দায়ের করা চলমান রীটের প্রেক্ষিতেই স্থায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার জন্যই আকস্মিক এক বিশাল রদবদলের ঘটনা। এদিকে, তেমন কোন যৌতিক কারণ ব্যতীরেকেই শিক্ষা বোর্ডে স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ঘনঘন বদলীকরণের ঘটনা ঘটলেও প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা একই পদে অবৈধপন্থায় ছয় থেকে সাত বছরের অধিক সময় ধরে দায়িত্বপালন করলেও ঐসকল উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কেনো বদলী হয়না বলে প্রশ্ন তোলেন বোর্ডে কর্মরতরা? এই ধরণের অবাঞ্চিত বিশাল পরিসরের পদায়ন বা বদলীকরণ ও সরকারের দেওয়া সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের রশি টেনে না ধরলে শিক্ষা বোর্ড পরিণত হবে দুর্নীতির বড় আখড়ায় বলে মন্তব্য অনেকের। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে অনেকেই অনুরোধ করেছেন বিষয়গুলোর প্রতি একটু সুদৃষ্টি দিতে।
এ বিষয়ে কথা বলতে সদ্য যোগদানকৃত বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।