ভুঞাপুরে আগাম বন্যায় ডুবে গেল কৃষকের স্বপ্ন।

 প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২০, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন   |   ঢাকা


মুহাইমিনুল (হৃদয়) :

কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।আগাম এ বন্যার কারণে টাংগাইলের ভূঞাপুরে কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের কালিপুর, জয়পুর ,নিকলাপাড়া ও সোহাগিপাড়া সহ বিভিন্ন স্থানে অনেক ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব জমিতে রয়েছে ধান, তিল, কাউন, বাদাম, পাট, রাঁধুনিসজ ও শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। এই নিয়ে হাজারো কৃষক চরম বিপাকে পড়েছে। কৃষকের অনেক স্বপ্ন ছিলো, সুখে শান্তিতে দিন কাটাবে কিন্তুু সর্বনাশা আগাম বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো।


এদিকে ফসল হারিয়ে কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা নেমে এসেছে। বেশির ভাগ কৃষক বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক অথবা চড়া সুদে মানুষের কাছ থেকে ঋণে টাকা এনে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেছে। এখন বন্যার পানিতে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় তারা দুই চোখে অন্ধকার দেখছে।


কৃষকরা জানিয়েছে, এমনিতেই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তার ওপর আবার আগাম বন্যার কারণে পানির নিচে তলিয়ে গেছে ফসলের জমি। এই আগাম বন্যার কারণে বিলীন হয়েছে ফসলসহ কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি। ফলে এসব ফসল ঘরে তোলার কোনো আশাও নেই তাদের। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।


গাবসারা ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার ১০ বিঘা বাদামসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। আমি এনজিও থেকে ঋণ এনে ধান, বাদাম ও অন্যান্য ফসল লাগাইয়াছিলাম। আমার মতো অনেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে ধান ও বাদাম লাগিয়েছে। এখন ঋণের টাকা শোধ করবো কেমনে? সরকার যদি আমাদের দিকে না তাকায় তাহলে আমরা না খেয়ে মরার অবস্থা হবে।


কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি ও আগাম বন্যায় জমির পাকা ধান ও বাদাম তলিয়ে গেছে। অনেক ক্ষেতের ফসল পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। ক্ষতি যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে। যারা পানিতে ধান কাটছেন তারা নৌকায় করে পারে আনছেন কিন্তু তলিয়ে যাওয়া বাদাম আর তোলা সম্ভব নয়। সেগুলো পানির নিচে পচে গেছে। এখন আল্লাহ ছাড়া কেউ বাঁচাতে পারবে না।


এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউর রহমান বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর কৃষকেরা জমি চাষ করেছেন বেশি।ফলনও হয়েছে অনেক ভালো। কিন্তু প্রচুর বৃষ্টিপাত ও আগাম বন্যার কারণে চাষিদের আবাদি ফসলগুলো তলিয়ে গেছে এবং তাদের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। উপজেলার গাবসারা, নিকরাই‌ল, গোবিন্দাসী ও অর্জুনা ইউনিয়নের বন্যায় এ বছর ৭ হাজার ৯'শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ হলেও ৩ হাজার ৯'শ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এ বন্যার পানি বেশি দিন স্থায়ী থাকবে না, অতি দ্রুতই কমে যাবে মনে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে দিতে প্রণোদনাসহ নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে কৃষকরা কতটুকু ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

ঢাকা এর আরও খবর: