শামীম চৌধুরী, রাজধানীর দক্ষিণখানে একটি বেসরকারী ব্যাংকের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এই কর্মকর্তা হলেন, ইউনিয়ন ব্যাংক আশকোনা বাজার শাখার ম্যানেজার অপারেশন মো. বখতিয়ার হোসেন। তার খপ্পরে পড়ে প্রতারণার শিকার হন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই হচ্ছেন এই ব্যাংক শাখার গ্রাহক (একাউন্ট সদস্য)। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি এ ঘটনা জানাজানির পর কর্মকর্তা বখতিয়ার হোসেনকে অন্যত্র শাখায় বদলী করা হয়। বর্তমান ইউনিয়ন ব্যাংক প্রধান কার্যালয়, বেহেলা টাওয়ার, গুলশান ১ কর্মরত আছেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, প্রতারণার শিকার সাংবাদিকসহ আন্তত ২০ জনের তালিকা ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় হিউম্যান রিসোর্স ডিভিশনে (মানবসম্পদ বিভাগ) পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। জানা গেছে, প্রতারণার অভিযোগে ইউনিয়ন আশকোনা বাজার শাখার কর্মকর্তা ম্যানেজার অপারেশন বখতিয়ায়ের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার (৩ জুলাই) দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। যার নম্বর ১২১। পুলিশ জানায়, ৩ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে সাংবাদিক মোঃ শহিদুল আলম বাদী হয়ে এই ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি দায়ের করেন। এ ব্যপারে তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই হাসান আলী জানান, প্রতারণার অভিযোগে ইউনিয়ন ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা জিডি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে ওই কর্মকর্তার অবস্থানসহ তার বিরুদ্ধে খোঁজ খবর নেওয়া হয় বলে পুলিশ জানায়। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও দক্ষিখান থানা সুত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন ব্যাংক আশকোনা বাজার শাখার নিয়মিত গ্রাহক সাংবাদিক শহিদুল আলম। তিনি আশকোনা এলাকায় স্বপরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ব্যাংকে নিয়মিত লেন-দেনের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাংকের কর্মকর্তা ম্যানেজার অপারেশন বখতিয়ার হোসেন এর সঙ্গে তার সম্পর্ক ঘটে। এই সম্পর্কের সুত্র ধরে গত ২৯ নভেম্বর-২০১৭ সাল, বিশেষ প্রয়োজন থাকায় অনেক অনুরোধের মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তা বখতিয়ার হোসেন তিন লাখ টাকা ধার চান সাংবাদিক শহিদুল আলম এর কাছে। তিন মাসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করবেন বলে এমন মৌখিক অঙ্গীকার দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা বখতিয়ার এই ইউনিয়ন ব্যাংক শাখার একটি চেক দেন শহিদুল আলমকে। এ সময় সরল বিশ্বাসে তিনি চেকের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা ধার দেন ব্যাংক কর্মকর্তা বখতিয়ারকে। কিন্তুু তিন মাস পর ওই টাকা চাইলে সে আজ দেই কাল দেই বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে। তিনি এই চেকের বিষয়টি ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। এসময় কর্মকর্তারা তাকে বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তা ম্যানেজার অপারেশন বখতিয়ায়ের বিরুদ্ধে আরও ২০ জনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভুক্তভোগীদের মধ্যে সাংবাদিক শহিদুল আলমের তিন লাখ, গোলাম কিবরিয়ার সাত লাখ ও অন্যান্য ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই বাংক কর্মকর্তা বখতিয়ারের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে এ ব্যাংক শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানান, ব্যাংক কর্মকর্তা বখতিয়ার হোসেনের প্রতারণার শিকার সাংবাদিক শহিদুল আলমসহ অন্তত ২০ জন। এ প্রতারণার বিষয়টি ইউনিয়ন ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে অবহিত করা হয়। ইউনিয়ন ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, কর্মকর্তা বখতিয়ার হোসেন ব্যাংকের চেয়ারে বসে গ্রাহকসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এতে করে সুনাম নষ্ট হয়েছে বেসরকারি এই ইউনিয়ন ব্যাংকের বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।