শার্শায় ৮২ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই

 প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১১:৫৬ অপরাহ্ন   |   খুলনা



মনা,বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধিঃ

যশোর ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর ও স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও যশোরের শার্শা উপজেলার ৮২ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষার মাস এলেই কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তবে তা খাতা কলমে সীমাবদ্ধতা। সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করার নির্দেশ থাকলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে আবার অনেক শহিদ মিনার জরাজীর্ণ। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই চলে ঘষামাজার কাজ। তবে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছে শিক্ষা অফিস। তবে শহিদ মিনার নির্মাণে নেই কোন অগ্রগতি।


জানা যায়, শার্শা উপজেলায় ৩৩টি মাদ্রাসার একটিতেও শহিদ মিনার নেই। তাছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়েও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন হয় না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ আছে। এসব কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিতে সমাজের নামীদামি ব্যক্তিরা শীর্ষ পদে থাকলেও দীর্ঘদিনেও শহিদ মিনার নির্মাণ করতে পারেনি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অথচ তারা অন্য খাতে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে ও বরনে। ফলে নানা ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে ভাষাপ্রেমী মানুষের মধ্যে। 


প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শার্শায় ২শ‘৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১২৬টি প্রাথমিক ও প্রি-ক্যাডেট এবং কমিউনিটি মিলিয়ে আরো রয়েছে ৫৪টি। এদের মধ্যে শহিদ মিনার আছে মাত্র ১৮টিতে। ৩৮টি হাইস্কুলের মধ্যে ২৬টিতে শহিদ মিনার আছে। ১২টি কলেজের মধ্যে মাত্র ৩টিতে শহিদ মিনার আছে। ৩৩টি মাদ্রাসার মধ্যে একটিতেও কোন শহিদ মিনার নেই। তবে সব মিলিয়ে অর্ধ-শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার আছে। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়। অভিযোগ আছে, মাদ্রাসাগুলোতে দিবসটি পালন করা হয় না। কোন কোন মাদ্রাসায় নামমাত্র মিলাদ মাহফিল ও পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনসহ কোন ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহিদ মিনার নির্মাণ না হওয়ায় ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না শিক্ষার্থীরাসহ এলাকার মানুষ।


উপজেলার নাভারন বুরুজবাগান ফাজিল মাদ্রাসার সুপার এ,কিউ,এম ইসমাইল হোসাইন জানান, মাদ্রাসাটি ১৯৬৫ সালে নির্মিত হলেও অদ্যবধি শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবস পালন করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।


নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার বলেন, আমাদের কলেজে শহিদ মিনার না থাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার পায়ে হেটে বুরুজবাগান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়। অথচ আমাদের কলেজের পরিচালনা পরিষদে নামী দামি ব্যক্তিরা রয়েছে। তারা ইচ্ছা করলেই একটি শহিদ মিনার নির্মাণ করে দিতে পারেন।


নাভারন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল জানান, আমাদের কলেজের পাশেই হাইস্কুলের শহিদ মিনার থাকায় এখানে শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তাপরও জায়গা সংকট রয়েছে। 

বেনাপোলের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কবি বকুল হক বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এ ধরণের খবর আমাদের সকলের জন্য দুঃখজনক। অতি দ্রুত প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।


এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার থাকা বাধ্যকতা থাকলেও শার্শার অনেক প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণে পত্র দেওয়ার পরও তারা শহিদ মিনার নির্মাণে কোন উদ্যোগ নেয়নি। শহিদ মিনার নির্মাণে সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।


শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রি ক্যাডেট এবং কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৪টি। ১৮০টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬২টিতে কোন শহিদ মিনার নেই। যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই, সেখানে দ্রুত শহিদ মিনার নির্মাণ করতে বলা হয়েছে।

খুলনা এর আরও খবর: