গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত-৩০, উত্তেজনা চলছে
হায়দার হোসেন:
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তার ও ক্যালেন্ডার বিতরণকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় বিএনপি'র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও নির্বাহী কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এসময় অন্তত ১৫টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। গত ১১ জানুয়িারি শুক্রবার রাতে মুকসুদপুর উপজেলার সদরের চৌরঙ্গী এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এঘটনার পর আজ শনিবার (১১ জানুয়ারী) সকালে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকায় শোডাউন করায় থমথমে অবস্থান বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে, কয়েকটি গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ শিরোনামে সংবাদ প্রচার হওয়ায় মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
মুকসুদপুর থানার ইনেসপেক্টর (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল জানান, মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি'র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও নির্বাহী কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহর সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারপ করে আসছিল।
শুক্রবার রাতে উপজেলার স্থানীয় চৌরঙ্গী মেড়ে সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ-এর উপজেলা ছাত্র দল নেতা আরিয়ান হক জীম বিএনপি নেতা মেজবাহ-র দেয়া শুভেচ্ছা ক্যালেন্ডার বিতরণ করছিলেন। এ নিয়ে সেলিমুজ্জামান সেলিমের কয়েকজন সমর্থক ক্যালেন্ডার বিতরণকারীকে মারধরে করে। এখবর ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। মুহুর্তের মধ্যে মুকসুদপুর উপজেলা সদরে দুই পক্ষের সহস্রাধিক কর্মী সমর্থক রাস্তায় বেরিয়ে আসে। এক পর্যায়ে লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় উভয় পক্ষ একে অপরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুরো এলাকাজুড়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় দুই পক্ষে অন্তত ৩০ জন সমর্থক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসময় অন্তত ১৫টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। প্রায় ৩ ঘন্টা পর পরিস্থিতি নিয়স্ত্রনে আনে পুলিশ। মারাত্মক আহত ৯জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এলাকা জুড়ে থমথমে অবস্থা :
আজ শনিবার সকালেও কেন্দ্রীয় বিএনপি'র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের সমর্থক উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক স্বপন মোল্যার নেতৃত্বে ও নির্বাহী কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহর সমর্থক সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি খিপু মিয়ার নেতৃত্বে এলাকায় শোডাউন করায় প্রস্তুতিতে থমথমে অবস্থান বিরাজ করছে। সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় বিএনপি'র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের সমর্থকরা স্থানীয় সোনালী ব্যাংক মোড়ে এবং সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহর সমর্থকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটে অবস্থান নেয়।
এব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে বিএনপির কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ছিলো না তারা এখন এলাকায় বিএনপি করতে চায়। এমনকি তারা আওয়ামী দোসরদের বিএনপি রাজনীতিতে সক্রিয় করতে চাচ্ছে। তাদের দলে কোন অবস্থান নেই জেনেই এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপিতে কোন গ্রুপ নেই।
কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেছেন, গত শুক্রবার রাতে আমার ক্যালেন্ডার বিতরন করার সময় আমার কর্মিদের উপর কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের লোকজন হামলা চালিয়ে মারধর করে। পরে পুলিশের উপস্থিতে হামলা চালানো হয়। বিএনপি নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ডাক্তারের চেম্বার ভাঙ্গচুরসহ দোকানপাট ভাংচুর করে। সেলিমুজ্জামান সেলিম আওয়ামী পরিবারের সদস্য। তিনি উল্টো আওয়ামী লীগ কর্মীদের দলে সক্রিয় করতে চাচ্ছে। এছাড়া সেলিমুজ্জামান সেলিম দিদার হত্যা মামলা ও সেনাবাহিনীর উপর হামলা এই দুটি মামলায় আসামী দিয়ে চাঁদাবাজী করছে। আমার বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজীর কোন অভিযোগ নেই। তিনি আরো বলেন মুকসুদপুর থানার ওসি মোঃ মোস্তফা কামাল সেলিমুজ্জামান সেলিমের নেতাকর্মীদের প্রশ্রয় দিয়ে এই ঘটনার জন্ম দিয়েছে।
মুকসুদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোস্তফা কামাল জানান, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে এখন পযর্ন্ত কোন পক্ষই থানায় মামলা দায়ের করেনি। উপজেলা সদরে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ :
কয়েকটি গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ শিরোনামে সংবাদ প্রচার হওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হায়দার হোসেন।
তিনি তার ফেসবুক পেইজে ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠানো প্রতিবাদপত্রে লিখেন, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তার ও পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম গ্রুপ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ-এর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের সংবাদ কতিপয় গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংঘর্ষ বলে প্রচারিত হয়েছে। যা আমাদের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
তিনি আরো লেখেন, মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রবিউল আলম শিকদার তার ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে বলেছেন "মুকসুদপুরের বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি'র সংঘর্ষ বলে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা দায়িত্বশীল গণমাধ্যমকে বিনীতভাবে জানাতে চাই, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপাতত রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নেই। মুকসুদপুরে এমন ঘটনা ঘটার বিগত দিনে কোন ইতিহাস নেই। আমরা শান্তিপুর্ণ সহবস্থানে রাজনীতি করেছি। গত ২১ বছরে আমাদের পক্ষ থেকে একটিও রাজনৈতিক মামলা হয়নি। এমতস্থায় প্রিয় সাংবাদিক ভাইদের সঠিক সংবাদ প্রকাশের আহবান জানাই। মুকসুদপুর আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদপত্র ও প্রকাশের অনুরোধ রইল।
মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসনিম আক্তার বলেন, দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা পিরিস্থিতি ঠিক রাখতে সকল ধরনের প্রস্ততি রয়েছে।আশাকরি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি যাতে খারাপ না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহবান জানান তিনি।