ঝিকরগাছার বাঁকড়ায় শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা।

 প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২০, ১২:২১ অপরাহ্ন   |   জাতীয়


আব্দুল জব্বার, যশোর জেলা ব্যুরো প্রধানঃ

 যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া গ্রামে আলোচিত শিশু আল আমিন (৬) রহস্যজনকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে জন্ম হওয়া এই শিশুর অগ্নিদগ্ধ হওয়া নিয়ে তার বাবা ও মার পক্ষের লোকজন একে অপরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করছেন। উভয় পক্ষই বলছেন, তাদেরকে বিপদগ্রস্থ করতে শিশুটিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হতে পারে। আগুনে ঝলসে যাওয়া শিশুটি বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক। আল আমিন, বাঁকড়ার দাউদ সরদারের ছেলে। তার মা   তামান্না খাতুন। দাউদ সরদার তাকে ধর্ষণ করেছিলো।


শিশু আল আমিনের নানী সাকিরন নেছা জানান, তিনি অভাবী মানুষ। এজন্য তিনি দাউদ সরদারের বাড়িতে কাজ করতেন। কাজ করার সুবাদে তার কিশোরী  মেয়ে তামান্নাও তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা করতো। এ সুযোগে দাউদ সরদার তার মেয়েকে একদিন জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। তারপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আরও অনেকবার ধর্ষণ করে। এতে সে গর্ভবর্তী হয়ে পড়ে। তবে দাউদ সরদার তা অস্বীকার করেন।এ জন্য তিনি বাদি হয়ে যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্রুনালে মামলা দায়ের করেন। যার নং-২২৩১৭, তাং- ২০-১০-২০১৫ ইং বর্তমানে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্রুনাল-২ তে বিচারাধীন রয়েছে। খুব দ্রুত ঐ মামলার রায় হবে।


সাকিরন নেছা বলেন, দাউদ আমার মেয়ের গর্বের সন্তান তার নয় দাবি করলে  তিনি মেয়ের  সন্তানের  ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন করলে আদালত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী গর্ভের সন্তান দাউদ সরদারের বলে প্রমাণ হয়। তখন আদালত দাউদ সরদারকে আটকের নির্দেশ দিলে তিনি তামান্নাকে বিয়ে করতে রাজি হন। তবে বিয়ে করলেও দাউদ ঐ বাচ্চা ও তার স্ত্রীকে স্বীকৃতি দেয়নি। এজন্য তামান্না বাপের বাড়িতেই থাকে এবং আমরা মামলাও চালাচ্ছি।

সাকিরন অভিযোগ করে বলেন, দাউদ সরদারের বয়স ৬৫ বছর। তার ছেলে-মেয়েরা অনেক বড়, উচ্চ শিক্ষিত ও বিভিন্ন জায়গায় চাকুরী করেন। তাই ৫ বছরের আল আমিনকে নিয়ে দাউদ বিব্রতবোধ করেন। তাই সে প্রায় আল আমিনকে মেরে ফেলার ফন্দি করতো।


তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তারা যশোর সদরের এড়েন্দা গ্রামে থাকেন। তার সাথে মেয়ে তামান্না ও আল আমিন থাকএ। রোববার তিনি আল আমীনকে সাথে নিয়ে বাঁকড়া গ্রামে তার পিতার বাড়িতে বেড়াতে যান। এ খবর জানতে পারেন একই গ্রামের বাসিন্দা শিশুটির পিতা দাউদ সরদার। বুধবার রাতে আল আমীন ও তিনি একটি রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতে ঘরের ইটের জানালা দিয়ে পাটখড়ির মাধ্যমে মশারিতে আগুন দেয়া হয়। এ সময় আল আমীন চিৎকার দিলে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।



এ ব্যাপারে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাফিকুর রহমান স্বপন জানান, শিশু আল আমীনের শরীরের ৭০ ভাগ পুড়ে গিয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা বার্ণ ইউনিটে রেফার করা হয়েছে। তবে সেখানে নিয়ে চিকিৎসা করার অর্থ না থাকায় হাসপাতাল ও রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে চিকিৎসা বহন করা হচ্ছে।


আল আমিনের মা তামান্না বলেন, তার স্বামীই আল-আমিনকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। তার ইচ্ছা ছিল তার লালসার প্রমাণ শেষ করে ফেলা।এদিকে  দাউদ হাজি উল্টো অভিযোগ করছেন তার শাশুড়ি  বিরুদ্ধে। তিনি  সন্তানের শরীরে আগুন দেননি দাবি করে বলেন, তার শাশুড়ি সাকিরন বিবি তার সম্পত্তি আত্মসাতের জন্যে এই নাটক সাজিয়েছে। আল আমিনের গায়ে কীভাবে আগুন লেগেছে তিনিই ভাল বলতে পারবেন।


তিনি গণমাধ্যমকে জানান, এ পর্যন্ত মামলাটি নিষ্পত্তির জন্যে বাদীকে তিনি মোট ১২ লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এরপর বাদী আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করছেন ।যদি তার দাবিকৃত টাকা না দেয়া হয়, তাহলে শিশু আল আমিনকে হত্যা করে দায় তার উপর চাপাবেন বলে তিনি  হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তিনি আর টাকা দিতে অস্বীকার করায় সাকিরনই, আল-আমিনকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। দাউদ সরদার বলেন, একই ঘরে সাকিরন ও আল-আমিন ঘুমিয়ে ছিলো । আল-আমিন অগ্নিদগ্ধ হলেও সাকিরনের কিছু হয়নি।  এ থেকেই বোঝা যায় ঘটনা রহস্যজনক। মূলত তার কাছ থেকে নতুন করে টাকা আদায় করতেই তিনি এই মর্মান্তিক নাটক সাজিয়েছেন । তিনি এ ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি করেন।



অন্যদিকে, সাকিরন ও তামান্না জানান, দাউদ সরদার মুলত তার অপকর্মের প্রমাণ মুছে ফেলতে চায়। সে জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা ফন্দিও আঁটেন। তারই অংশ হিসাবে তার শিশুপুত্র আল-আমিন (৬) কে তিনি লোকজন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন। সাকিরন  বলেন, তার মেয়ে ও বাচ্চার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এবং সুবিচার পাচ্ছে। যা সহ্য করতে পারছেন না দাউদ ও তার সজনরা। তারা জানে মামলায় তারা হেরে যাবে।  এ জন্য প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে তারাই আল আমিনকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। তিনিও এ ব্যাপারে সঠিক তদন্তের দাবী  করেন।

জাতীয় এর আরও খবর: