যশোরে জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের আওতায় জয়নাল খাঁ পেয়েছেন সেই ঘর।

 প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২০, ০২:০২ পূর্বাহ্ন   |   জাতীয়


আব্দুল জব্বার, যশোর জেলা ব্যুরো প্রধানঃ

 যশোরের সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের বাসিন্দা হলেন জয়নাল খাঁ (৭৫) স্ত্রী, ৪ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাবার সম্পত্তি সূত্রে পাওয়া ৫ কাঠা জমির উপর, জরাজীর্ণ একটি মাটির ঘরেই কাটিয়েছেন জীবনের বেশির ভাগ সময়। মাটির ঘরের খড়ের ছাউনির ছিদ্র দিয়ে বর্ষায় পানি এবং শীতে হিমেল হওয়া ঢুকতো। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে শেষ ইচ্ছা ছিল ভালো ঘরে শুয়ে মারা যাওয়ার। এখন জয়নাল খাঁ’র সেই ইচ্ছা পূরণের সাথে দুর্ভোগও কমেছে কিছুটা।


গত মাসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি পেয়েছেন তিনি।


মঙ্গলবার ১৩ অক্টোবর ২০২০ আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের অনুষ্ঠানে, গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে ১৭ হাজার ৫টি ‘দুর্যোগ সহনীয় বাড়ির’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে জয়নাল খাঁকে বাড়ির চাবি বুঝিয়ে দিয়েছেন, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তা। এখন সেই বাড়িতেই নিশ্চিন্তে বসবাস করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।


দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি পেয়ে খুশি জয়নাল খাঁ। তিনি জানান, পরের কৃষি জমিতে কাজ করেই সংসার চালাতেন, দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রোক প্যারালাইজডসহ নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। এ অবস্থায় মাটির ঘরে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে, কষ্টের মাঝে বসবাস করতেন। এখন সরকার থেকে একটি পাকা ঘর পেয়েছেন তিনি।


তিনি বলেন, ইটের ঘর পাব তা স্বপ্নেও ভাবিনি। এখন শান্তি মতো ঘুমাতে পারব। দোয়া করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন সুস্থভাবে আরও অনেকদিন বেঁচে থাকেন।


শুধু জয়নাল খাঁ নয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে তার মতো যশোর জেলার ৮টি উপজেলার অসচ্ছল, হত দরিদ্র, গৃহহীন পরিবার, বিধবা, প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ ২১২টি আধাপাকা বাড়ি পেয়েছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলার ২১২টি পরিবারকে এই কর্মসূচির আওতায়, দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি দিয়েছে সরকার এমন বাড়ি পেয়ে খুশি তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, ধন্যবাদ জানিয়েছেন অসহায় এসব ভুক্তভোগীরা। তবে চাহিদার তুলনায় বাড়ি অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন অনেকেই।


জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৪০০ বর্গফুটের উপর বাড়িগুলো পাঁচ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ২ কক্ষের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ ১০ ফুট। প্রতিটি ঘরে দুটি করে লোহার বা কাঠের দরজা-জানালা, অত্যাধুনিক রঙিন টিনের ছাউনি, বারান্দা, একটি রান্নাঘর, রান্না ঘরে যাওয়ার করিডোর ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি বাতরুম রয়েছে। এসব বাড়ি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত প্রতিরোধে সক্ষম। ২১২টি পরিবারের প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা খরচ হয়েছে। যা মোট ব্যয় হয়েছে ৬ কোট ৩২ লাখ ৭০ হাজার ৪৬০ টাকা।


এ বিষয়ে যশোর জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা হায়দার আলী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা বিশেষ উদ্যোগ হলো দেশের কোনো মানুষ যেন বাস্তুহারা না থাকে, সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন সরকার। স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি বাতরুম ও রান্নাঘর সুবিধাসহ এসব বাড়ি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত প্রতিরোধে সক্ষম। ইতোমধ্যে ২১২টি বাড়িই সুবিধাভোগীদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় আরও বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের বাড়ি দেয়া হচ্ছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিনব ও চমৎকার উদ্যোগ। বাড়িগুলো পেয়ে হতদরিদ্ররা এতো খুশি হয়েছেন, যে তারা হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেছেন। আমরা সফলভাবে বাড়িগুলো তৈরি করতে পেরেছি। এতে করে গ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন হবে।


তিনি আরও বলেন, তবে চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জাতীয় এর আরও খবর: