কলারোয়ায় ফোর মার্ডারের ঘটনায় ছোটভাই রাহানুল গ্রেফতার।। ১০দিনের রিমান্ডের আবেদন।। মামলা সিআইডিতে হস্তান্তর।

 প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২০, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন   |   জাতীয়


মোঃআলামিন হোসেন সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধিঃ

 সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের ৪জনকে গলা কেটে হত্যা করার ঘটনায় নিহতের ছোটভাই রায়হানুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬অক্টোবর) বেলা ৩টার দিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডি। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাতেই কলারোয়া থানায় নিহত শাহিনুর রহমানের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  যার মামলা নং-১৪ (১০) ২০২০। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আনিছুর রহমান জানান, এই হত্যাকণ্ডের ঘটনায় এখনো বিস্তারিত বলার মত কিছু হয়নি, তদন্ত চলছে। নিহত শাহিনুর রহমানের ছোটভাই রায়হানুল ইসলামের গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ভোররাতে কলারোয়া উপজেলায় ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান গাজী (৪০) তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৩০) বড় ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (১০) ও মেয়ে তাসমিন (৭) কে ঘরের মধ্যে গলা কেটে হত্যা করে অজ্ঞতনামা দুর্বৃত্তরা। সঙ্গে থাকা ৪ মাস বয়সী ছোট মেয়ে আফরিনকে হত্যা না করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। উপজেলার ৯নং হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন জানান, শাহিনুর একটি ভালো ছেলে। ভদ্র ও নম্র স্বভাবের। তার উগ্র মনোভাব কখনোই ছিল না। পাঙ্গাস মাছের ব্যবসা করতেন তিনি। এলাকার একটি মানুষও তাকে খারাপ বলতে পারবে না। তিনি ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম-ফেজ-১১ প্রকল্পের (এনএটিপি-২) মৎস্য অধিদপ্তরের কলারোয়ার ব্রজাবাকসার (সিআইজি) সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেখান থেকে একটি মাছের পিকআপও ক্রয় করেছেন। এলাকায় অনেকের ধারনা, তিনটি কারণ উঠে আসছে আলোচনায়। সেটি হলো- ৩শতক ও ৫শতক জমি নিয়ে  দুই প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ, অন্যটি মাদক ব্যবসায় বিরোধিতা করা। আরেকটি হচ্ছে, অর্থনৈতিক লেনদেন নিয়ে বিরোধ থাকতে পারে। শাহিনুর রহমানের চার ভাই। বড়ভাই মারা গেছেন। মেজো ভাই রয়েছেন মালয়েশিয়াতে। সেজো ভাই নিহত শাহিনুর রহমান মাছের ব্যবসা করতেন। ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত কিছুদিন হলো মাছের খাদ্য বিক্রয়ের একটি দোকান করেছেন। বেশ কিছু দিন আগে এক মাদক মামলায় শাহিনুর রহমান গাজীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ছোট ভাইয়ের এসব কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করতেন শাহিনুর রহমান গাজী। এদিকে নিহতের ছোট ভাই রায়হাদুল ইসলাম দাবি করেছেন, বড় ভাই শাহিনুর রহমান ৭-৮ বিঘা জমিতে পাঙাস মাছ চাষ করতেন। ২২ বছর ধরে তাদের পারিবারিক সাড়ে ১৬ শতক জমি নিয়ে প্রতিবেশী ওয়াজেদ কারিগরের ছেলে আকবরের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছে। কয়েক দিন আগেও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের রুমে একটি শালিসে বৈঠক হয়। সেখানেও কোন মিমাংসা হয়নি। তারা প্রতিনিয়ত খুন জখম করার হুমকি দিয়ে আসতো। তাছাড়া কিছু ভাড়াটে লোক নিয়ে এসে তাদের সাথে মারামারিও করতো। এলাকায় বহু মানুষ সে বিষয়টি জানে। অন্যদিকে একটি সূত্র দাবী করছে-রায়হাদুল ইসলাম মাঝে মাঝে নেশা করতো। সে জন্য তার স্ত্রী ফাইমা খাতুন গত ৬/৭ মাস পূর্বে তাকে তালাক পাঠিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তার স্ত্রী বাপের বাড়ীতে রয়েছে। সাবেক স্ত্রী ফাইমা খাতুন জানান-তার সাবেক স্বামীর বাড়ীতে কোন দিন সিড়ের ঘরে তালা দিতেন না। যা এলাকায় অনেকে জানেন। পরিকল্পিত ভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি এঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেন। এদিকে জেলা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনার মোটিভ উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ। অতিদ্রুত আসামীদের সনাক্ত করা হবে।

জাতীয় এর আরও খবর: