রক্তিম ব্লাড ডোনার সোসাইটি স্বেচ্ছাসেবি মিলনমেলা ও মাসিক আলোচনা সভা।

পুষ্পেন্দু মজুমদার, চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
"এসো করি রক্ত দান, বাঁচিয়ে তুলি শত প্রাণ " এই শ্লােগান নিয়ে গড়ে উঠা সংগঠন রক্তিম ব্লাড ডোনার সোসাইটি স্বেচ্ছাসেবি মিলন মেলা ও মাসিক আলোচনা সভা।অনুষ্ঠানে মানবতারবাদী এক ঝাঁক স্বেচ্ছাসেবিরা উপস্হিত ছিলেন।যারা আলোর বিচ্ছুরণ ছড়িয়ে ঘরে ঘরে রক্তদাতা তৈরি করার সপথ নিয়েছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন-রক্তিম ব্লাড ডোনার সোসাইটি প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ পুষ্পেন্দু মজুমদার।
রক্তিম ব্লাড ডোনার সোসাইটি এডমিন ক্লিনটন দাশ ও পর্না চৌধুরী রাগিণীর সঞ্চালনায় সি আর বি উন্মুত্ত স্হানে শুক্রুবার ১৬ অক্টোবর ২০২০ স্বেচ্ছাসেবি মিলনমেলা ও মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্ত্যব প্রদান করেন,রক্তিম ব্লাড ডোনার সোসাইটি এডমিন জুয়েল মজুমদার ও শ্রুতি দে,তারা উপস্হিত সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।ধৈর্য ধারন করে সবার বক্ত্যব শুনার অনুরোধ করেন,তারা আরো বলেন,মিটিং চলাকালীন, আপনারা কেউ মোবাইল টিপবেন না,কথা বলবেন না।
এর পর শুভেচ্ছা বক্ত্যব প্রদান করেন,মানবতাবাদী, সুনন্দা নীলা,তিনি বলেন,আপনারা দশ পরিবারের দশ সন্তান,আজ এক্যবদ্ধ হয়েছেন, নিস্বার্থ ভাবে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং অনুষ্ঠান এর সবাইকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
এর পর সঞ্চালক ক্লিনটন দাশ, রক্ত দেওয়া কেন প্রয়োজন?কারা রক্ত দিতে পারবেন?রক্ত দেওয়ার পর কী হয়?কি ভাবে সচেতনাতা বৃদ্বি করা যায়?রক্ত দেওযার উপকারিতা ও প্রতিষ্ঠা বার্ষিকি কিভাবে করা যায তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন।
এর পর বক্ত্যব প্রদান করেন রক্তিম ব্লাড ডোনার সোসাইটি এডমিন মহসিন দূর্জয়, রক্ত দেয়া কেন প্রযোজন সেই বিষয়ে, তিনি বলেন
দুর্ঘটনায় আহত, ক্যান্সার বা অন্য কোন জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য, অস্ত্রোপচার কিংবা সন্তান প্রসব অথবা থ্যালাসেমিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়।পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বছরে আট থেকে নয় লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকলেও রক্ত সংগ্রহ হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ ব্যাগ। ঘাটতি থাকে তিন লাখ ব্যাগের বেশি।
এছাড়া সংগ্রহকৃত রক্তের মাত্র ৩০ শতাংশ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে।নিজের পরিবারের সদস্য বা পরিচিতজন না হলে এখনো বেশিরভাগ মানুষ রক্তের জন্য নির্ভর করেন পেশাদার রক্তদাতার ওপর।
রক্তের অভাবের কারণে প্রতিবছর বহু রোগীর প্রাণ সংকটের মুখে পড়ে।
এক ব্যাগ রক্ত দিতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট। এই অল্প সময়ে চাইলেই একজনের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
এর পর বক্ত্যব প্রদান করেন রক্তিম ব্লাড ডোনার সোসাইটি প্রিয় স্বেচ্ছাসেবি মৌ আক্তার মিথিলা,তিনি বলেন-কারা রক্ত দিতে পারবেন?
প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নারী-পুরুষ চাইলেই নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত দিতে পারেন। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে শারীরিকভাবে সুস্থ নারী ও পুরুষ রক্ত দিতে সক্ষম।
এক্ষেত্রে পুরুষের ওজন থাকতে হবে অন্তত ৪৮ কেজি এবং নারীর অন্তত ৪৫ কেজি।।রক্তদাতাকে অবশ্যই ভাইরাসজনিত রোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং চর্মরোগ মুক্ত থাকতে হবে।সাধারণত তিন মাস পর পর রক্ত দেওয়া যাবে।সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরে ৪ থেকে ৬ লিটার পরিমাণ রক্ত থাকে। প্রতিবার ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দেয়া হয়।এ কারণে রক্ত দিলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই নেই।
এর পর রক্তিম ব্লাড ডোনার সোসাইটি মডারেটর শুভ রামদেব তার বক্ত্যব বলেন রক্ত দেয়ার পর কী হয়?
রক্ত দেয়ার পর কিছুটা মাথা ঘোরাতে পারে। এটা স্বাভাবিক।তবে এ সময় হাঁটাহাঁটি না করে অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।রক্তদাতা যদি ঘামতে থাকেন এবং অস্থিরতা হয়, তবে তাকে স্যালাইন খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।তিনি বলেন, রক্ত দেয়ার সময় শরীর থেকে রক্তের পাশাপাশি ২৫০-৩০০ মিলিগ্রাম আয়রন কমে যায় তাই তার ক্ষয়পূরণে আয়রন ও প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এর পর বক্ত্যব রাখেন রক্তিম ব্লাড ডোনার স্বেচ্ছাসেবি আবিদা আক্তার-তিনি বলেন রক্ত দেয়ার উপকারিতা কি,দেশের বিভিন্ন ব্লাডব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নিয়মিত রক্ত দেয়ার কিছু উপকার রয়েছে। সেগুলো হলো:
১. এতে একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব।
২. নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
৩. বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরে নতুন লোহিত কণিকা তৈরির হার বেড়ে যায়। এতে অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে।
আরো বক্ত্যব প্রদান করেন উপস্হিত স্বেচ্ছাসেবিগন-
লিপটন সিনহা, প্রলয় চন্দ্র দাশ,লিও কমল দাশ,কানন চক্রবর্তি, মোঃশাহাদাত,রাকিব হোসেন,মোঃতাজুল ইসলাম,, তানিয়া আক্তার,আরিফুল ইসলাম,ইমরান ফাহিম,,রুপা আক্তার,রনি চৌধুরী, ,তারেক তাফি,বিনয়মিত্র ভিক্ষু, সরোয়ার আজিম,মোঃ রুবেল,স্বর্না চক্রবর্তি, শহিদুল ইসলাম,মোঃ জুনায়েদ,বশির আহম্মদ,জাহেদুল ইসলাম,এস এম রনি,মোঃ মনির,,অপু নন্দি, আশিষ চৌধুরী,ইয়াছিন আরাফাত।
এর পর সমাপ্তি বক্ত্যব প্রদান করেন অনুষ্ঠানের সন্মানিত সভাপতি ডাঃপুষ্পেন্দু মজুমদার, তিনি বলেন একজন মানুষ তার জীবদ্দশায় কতজন মানুষকে বাঁচানোর ক্ষমতা রাখেন? জেমস হ্যারিসন তার উদাহরন।উনি এমন এক ব্যক্তি যিনি একাই বাঁচিয়েছেন ২০ লাখ শিশুর প্রাণ। এতোগুলো শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছেন স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে নিজের রক্ত ও রক্তের উপাদান প্লাজমা দানের মাধ্যমে।
এজন্য গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নামও লিখিয়েছেন এই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে জরুরি অস্ত্রোপচারের কারণে ১৩ লিটার রক্তের প্রয়োজন হয়েছিলো মি. হ্যারিসনের। সে যাত্রায় রক্ত পেয়ে প্রাণ বেঁচে যায় তাঁর।এরপর বয়স ১৮ বছর হতেই নিয়মিত রক্তদান করতে শুরু করেন তিনি।
রক্ত দিয়ে একজন মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব। এজন্য একে বলা হয় পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও নি:স্বার্থ উপহার।
আসুন আমরা এক একজন হ্যারিসন হয় ।প্রতিষ্ঠা বার্ষিকির অগ্রিম নিমণ্তন দেন।পরিশেষে সবাইকে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সফল সমাপ্তি ঘোষনা করেন।।