অর্থের কাছে ভালোবাসা মূল্য হীন........

----------------//রওশন আরা আঁখি
সবে দশম শ্রেণির ছাত্র আমি,
বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই শুরু করে দিয়েছে
প্রেমের পাগলামি।
মাঝে মাঝে আমাকেও দেয় উস্কানি।
একই বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত
তখন সে হয়ত অষ্টম শ্রেণি।
বন্ধুদের কথায়,
প্রথম দিকটা তেমন পাত্তা দেই নি।
ক্লাসের অফটাইম, কিংবা ব্যালকনির পায়চারী,
ওর তাকিয়ে থাকা চোখের চাহনি,
আমাকে এক অদ্ভুত মায়ায় ফেলে দেয়,
আমার চোখের ঘুম কেড়ে নেয়।
বুকের মাঝে কেমন যেন একটা টান পড়ে!!
মনে হয় ছুটে যাই ওর কাছে।।
বন্ধুদের কাছে বলতে ই
ওরা বলে এই তো এবার ফেসেছিস,
ভালবাসার ফাঁস।
চল না, বলে ই ফেল তোর ভালবাসার অব্যক্ত কথা,
রাত দিন ভেবে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম
আজ আর না বলে আসব না।
দুরু দুরু বুকে
কোনও এক ফাঁকে বলেই ফেললাম,
এই তোমাকে আমি ভালবাসি।
শুনে ও দিল মুচকি হাসি।
প্রথমে একটু দুরত্ব থাকলেও,
আমার সরল ভালবাসা বল,
আর বিশুদ্ধ ভালবাসাই বল,
ওর মনটা জয় করে নিল।
শুরু হল আমাদের আলাপচারিতা
চিঠি পত্রের আদান প্রদান,
এক অদ্ভুত প্রেমময় ভাব অনুভত হয়
আমার অন্তর মাঝে,
আমার মনের মাঝে ওর পবিত্র মুখ ভাসে।
আমার ভালবাসায় ওই পবিত্র মুখ যত্নে রাখি,
ভালবাসার এত গভীরতায় ও কখনো ইচ্ছে হয়নি
ওর পরদার আড়ালের পবিত্র মুখ খানা দেখি।
ভেবেছিলাম পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ই
দেখব আমার সেই আকাঙ্ক্ষার প্রিয় মুখখানি।
এলোমেলো মনে কত ভাবনা এসে জড় হয়,
কি ই বয়স আমার!!
ওদিকে বন্ধুরা বলে
মেয়েদের মন বোঝা বড় ভার!!
একটা পাকাপাকি বন্দোবস্তো করলে কেমন হয়।
বেকার আমি, ভবঘুরে,
কোনও মতে দুশো টাকা যোগাড় করে,
একটা কাগজ কিনলাম,
ওকে বললাম,
একটা সই করে দাও
আমাকে ছাড়া তুমি যাবে না অন্য কোথাও।।
কি ভেবে না ভেবে,
দুদিন বাদেই আমাকে বলল, আমাকে কি তুমি বিশ্বাস করোনা!!
কাগজের কি কোনো মূল্য আছে?
পবিত্র গ্রন্থ স্পর্শ করে বলতে পারি,
আমি শুধু তোমাকে ই ভালবাসি,
আমি শুধু তোমাকে ই ভালবাসি।
আমি পবিত্র গ্রন্থ স্পর্শ করতে দেইনি,
আমি ওকে বিশ্বাস করেছি।
এভাবেই চলছিল আমাদের ভালবাসার প্রহর,
হঠাৎ জীবিকার তাগিদে আমাকে চলে যেতে হয়
অনেকদূর।
মনের মাঝে ভাবনা,
ওকে ফেলে দূরে যেতে চাইছে না মন,
আবার বন্ধুদের সাথে আলোচনা।
মনের মাঝে ধরমান্ধতা বাসা বাঁধে
চলে যাই মৌলভির কাছে,
ওকে আমার ভালবাসায় আটকাতে।
শহরে এসে আমার মন টিকছে না,
আমার ভালবাসাকে ফেলে এসেছি
এ ভাবনায় দুচোখ এক হতে চায় না।
হঠাৎ সংবাদ!
শুনে আমি হতবাক।
ওর নাকি বিয়ের সম্বন্ধ পাকা,
আমি হতবিহ্বল, দিশেহারা।
আমি শেয়ার করলাম ওর ভাবীর সাথে,
আমার পবিত্র ভালবাসার কথা।
ও প্রান্ত থেকে উত্তর এল,
আমি বেকার যুবক, আমার ইনকাম কি?
আমি ওকে খাওয়াব কি?
আমি হতাশ!
ভাবিনি কখনো পবিত্র ভালোবাসায়,
ইনকামের প্রশ্ন এসে আমাকে দাড় করাবে
কাঠ গড়ায়।
আমার শেষ চেষ্টা
আমার ভালবাসার কাছে,
তার থেকে ও একই প্রশ্ন,
আমার ইনকাম কি আছে?
এ কথা শোনার পরে,
আমার কেন মৃত্যু হল না,
ওকে না পাওয়ার যন্ত্রনায়,
আমাকে ভুগিয়েছে অনেকটা সময়।
আমি ভালবাসায় এতটাই ডুবেছিলাম,
ওর স্বামীর ঘর থেকে ফিরে এলে ও
নতুন ঘর বাঁধতাম।
একবার চেষ্টা করেছিলাম,
এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে,
ঘুমের ওষুধ ক পাতা খেয়েছিলাম,
কিন্ত,সেবারের মত বেঁচে ফিরলাম।
হয়ত বিধাতা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন,
বেকার যুবকের তকমা ঘোচাতে।
অবচেতন মনে চেতনার উদ্রেক আবির্ভূত ,
শ্রমের বিনিময়ে ঘুচাব বেকারত্ব।
শুরু হল নতুন পথচলা,
দিনরাত শ্রম,
অর্থকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসবই,
এ আমার দৃড় প্রতিজ্ঞা।
পবিত্র শ্রম
বিধাতা নিরাশ করেন না।
আজ আমি বিত্তবৈভবের মালিক,
আমার বেকারত্ব ঘুচেছে,
ওর কথা আজ খুব মনে পড়ছে,
ওর ওই একটি বাক,
আমার মাঝে জন্ম দিয়েছিল ত্যাগ।
যার জন্য আজ আমার এই সফলতা
অর্থের জন্য অস্বীকার করেছিল
আমার পবিত্র ভালবাসা।
এখন আমার বোধগম্য,
ও ভালবেসেছিল আমাকে নয়,
ভালবেসেছিল অর্থ,
যে অর্থের কাছে,
আমার পবিত্র ভালবাসা হয়েছিল ব্যর্থ।