ধর্ষকের পরিচয় সে ধর্ষক।

শেখ সোহাগ, মুকসুদপুর উপজেলা ছাত্রলীগ, গোপালগঞ্জ( শেখ সোহাগ )ঃ
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের কিছু হৃদয়বিদারক ঘটনা আমাদের সকলের মনে দাগ কেটেছে। সারাদেশের মানুষ এই পৈশাচিক ঘটনার জন্য নিন্দা জানাচ্ছে। করোনা যখন পৃথিবীর মানুষ কে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে সেই রেশ কাটতে না কাটতেই কিছু নরপশুদের ছোবলে সমাজের নারী ও পুরুষদের মধ্যে এই সব ভীতি কাজ করছে।
আসলে ধর্ষণ কি এই বিষয়ে আলোকপাত করতে গেলে দেখা যায় ধর্ষণ’ এক ধরনের যৌন আক্রমণ। সাধারণত, কোন নারী বা পুরুষ ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন হয়রানির ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ মানুষিক হীনমন্যতার এক মারাত্মক নেতিবাচক অসুখ। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কোনভাবেই ধর্ষণের মত জঘন্য কাজ করতে পারে না। ফলে সামাজিক এই ব্যাধি নির্মূলে সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষের সচেতনতা, গভীর নজরদারি, পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের সবাই কে দল মত ধর্ম বর্ণ ব্যতিরেকে মানুষের জন্য মানুষ এই মর্মে কাজ করতে হবে।
ইতিহাসের নানাদিকে তাকালে দেখা যাবে ধর্ষণের মত জঘন্য কাজ কখনও কখনও রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে করা হয়েছে। আমরা যদি আন্তর্জাতিক সংঘাত বা যুদ্ধের সময়কাল কে দেখি তাহলে দেখা যাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ও ব্যাপক হারে ধর্ষণ (যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতা ও যৌন দাসত্ব) ঘটানো হয়েছে।মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধর্ষণ গণহত্যার একটি উপাদান হিসেবেও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় ধর্ষণের শিকার হওয়া বেশিরভাগ ঘটনা পরিচিত জনদের মাধ্যমে ঘটে থাকে। অর্থাৎ ধর্ষিত নারী বা কন্যার পরিচিত জনেরাই সবচেয়ে বেশি জড়িত থাকে।
কিছু দিন আগে সিলেটের ঘটনাটি শুনে আমাদের সকলের হৃদয়ে দাগ কেটেছিল। ঢালাওভাবে ছাত্রলীগের নামে বদনাম করা হয়েছে অথচ এখন আস্তে আস্তে বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে মেয়েটি এদের পূর্ব পরিচিত। যে ব্যক্তি ধরিয়ে দিলেন তিনি ছাত্রলীগের এক সময়ের পরীক্ষিত নেতা ছিলেন।
যখনই একটা ঘটনা ঘটে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ লক্ষ্য ঠিক করে রাখেন কিভাবে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগানো যায়। কিভাবে সরকারি দলের নামে সেই অপরাধ কে চালানো যায়। গত এক বছরে প্রায় চার হাজারের মত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তারমধ্যে দুই একটা ঘটনার সাথে সরকারি দলের কোন সংগঠনের মধ্যে কৌশলে ঢুকে পড়া কিছু অর্বাচীনের নাম এসেছে যাদের পারিবারিক পরিচয় ইতিমধ্যে সকলে জেনেছে। যে প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে বিএনপি জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত এবং দিব্যি পদেও আছেন। এই সব জামায়াত বিএনপি পরিবারের সদস্যদের অত্যন্ত সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিবে তাদের দিয়ে নানাবিধ অন্যায় করানো হচ্ছে সরকার কে বেকায়দায় ফেলতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামল দেখলে বুঝতে পারবেন আজ পর্যন্ত কোন অপরাধী কে সরকারিভাবে কিংবা রাজনৈতিক দল হিসাবে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি বরং সরকারি দলের অনেক উচ্চ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কঠোর হয়েছেন।
আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সব সময় সরকারি দলে কিছু অপরাধী সুবিধাবাদীরা কৌশলে ঢুকে পড়ে। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকারি দল হিসেবে কাজ করছে এখানে সবাই শতভাগ শুদ্ধ শতভাগ খাঁটি এটা বলার মত রাজনৈতিক পরিবেশ এখনও আসেনি তবে সকলের দেখতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কোন অপরাধী কে সহোযোগিতা করছে কি’না বা আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে কি’না? বিচারহীনতা সংস্কৃতি এই দেশে নতুন নয় তবে এটাও সত্যি বঙ্গবন্ধুর কন্যা এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমাদের কে বের করে এনেছেন। তিনি ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন অপরাধী যে দলেরই হোক, যে পরিচয়েই হোক তার কোন ছাড় নেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় এই সব নয়া দল করতে আসা টাউট-বাটপার দের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেন। তিনি সাংগঠনিকভাবেও এদের বয়কট করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ সহ সকল সংগঠন কাজ শুরু করেছেন দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
কিছু হলেই সরকার সরকার বলে কিছু মানুষ বুলি আওড়ায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাবিধ ভুল তথ্য-গুজব ছড়ায়। তাই এসব কাজ থেকে বিরত থেকে সকলের সতর্ক হওয়া উচিত। যারা সামাজিক মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার তাদের ভাবা উচিত এই সমাজ ও দেশের জন্য তারা কতটুকু অবদান রেখেছে। পরিবার প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ কতটুকু?
বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি ঘটনা ঘটার সাথে সাথে প্রশাসন কে কঠোর বার্তা দেন। সিলেটের ঘটনায় সবগুলো আসামি দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বেগমগঞ্জের ঘটনায়ও ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ ও র্যাব কে ধন্যবাদ যে তারা সকল আসামীদের গ্রেপ্তার করেছেন।
আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম প্রতিবাদের ভাষা হবে অন্যায়কারী দুষ্কৃতকারী ধর্ষণকারী যেন কঠিন বিচারের সম্মুখীন হন তাদের বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না সেই বিষয়ে প্রতিবাদ করা কিন্তু আমরা কিছু একটা হলেই দেখতে পাই সব কিছুতেই সরকারি দলের দোষ খোঁজা তাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো।
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ভাবে কখনও কোনদিন কোন অন্যায়কারী দুষ্কৃতকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় সততা দেশপ্রেম আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেন, দেশসেবা করেন। এই বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন, নারীর স্বাধীনতা, সম্মানের জন্য ও নিরাপত্তার জন্য তারচেয়ে বেশি কাজ কেউ করেনি সুতরাং হতাশার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে কাউকে কোন ছাড় দিবেন না।
মসজিদের ইমাম, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সকলকে যার যার অবস্থান থেকে সজাগ ও সোচ্চার থাকতে হবে। মানুষ সততার সাথে চাইলে মন থেকে সৎ উদ্দেশ্যে চাইলে পারে না এমন কোন কাজ নেই।
সুতরাং সবার প্রচেষ্টা হোক সমাজের অসংগতি ধর্ষণ মাদকের বিরুদ্ধে। মা বোন স্ত্রী স্বজনের জন্য হলেও সকলের সচেতন থাকা উচিত। গুটিকয়েক ধর্ষণকারীদের কাছে আমরা হার মানতে পারি না। ‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ এই হোক সামাজিক বসবাসের মূলমন্ত্র। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।