মানবেতর জীবন তিন প্রতিবন্ধী বোনের, চান সহায়তা

 প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৯ অপরাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ


শেখ লিয়াকত আহম্মেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক 

মানবেতর জীবনযাপন করছেন মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূর্ব দর্শনা গ্রামের একই পরিবারের তিন প্রতিবন্ধী বোন উম্মি বেগম(৬২), আকিতন(৫৫) ও নুননাহার(৩৯), চান বেঁচে থাকার সহায়তা। সমাজে আর-দশটা শিশুর মত তারাও স্বাভাবিকভাবেই জন্ম গ্রহন করেন। কিন্তু জন্মের কয়েক বছর পরই অজানা এক রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা সবাই শারীরিক প্রতিবন্ধীতে পরিনতি হয়। প্রায় একযুগ আগে পিতা সুলতান হাওলাদার ও মাতা জাহেরা বেগমের মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পরে তারা। এলাকাবাসী তাদের সাহায্য সহযোগিতা করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল হওয়ায় তাদের বেঁচে থাকা দুরূহ হয়ে পরেছে। পরিবারের উপার্জনক্ষম কোন পুরুষ না থাকায় পাড়া প্রতিবেশিদের সামান্য সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। 

এদিকে নানা রোগে আক্রান্ত আকিতন নেছা শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় আগের মতো মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য যেতেও পারে না। খাবারের সন্ধানে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে যা পায় তা দিয়ে তিন বোন কোন রকম বেঁচে আছেন।

আকিতন নেছা প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও পরিবারের অন্য দুজন সদস্যের ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা সহ সরকারী কোন সহায়তা। ফলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির এই সময়ে অর্থকষ্টে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের।

উম্মি বেগম মুখে জড়তা নিয়ে বলেন, আমাগো কিচ্ছুই নাই আমরা তিনডা বুইন এমুনই, আমাগো সাহায্য করেন। আরেক বোন নূননাহার বলেন, আমাগো কিছুই নাই, কেউ কিছু দিলে খাই, না দিলে না খাইয়া থাকি। আপনেরা আমাগো কিছু দিয়া যান।

বাড়ীর প্রতিবেশি ইউনুস হাওলাদার জানান, আমারা ছোট কাল থেকে দেখতেছি ওরা তিনটা প্রতিবন্ধী বোন অসহয়। মানুষের সাহায্য সহযোগীতায় তারা কোন রকম বেঁচে আছে। আমরাও তাদেও যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগীতা করি। তারা তিনটা বোনই যদি প্রতিবন্ধী ভাতা পেত তাহলে তাদেও বাঁচার একটা অবলম্বন হতো।

উম্মি বেগমের ছোট চাচা মো. তৌয়ব হাওলাদার বলেন, আমার বড় ভাই মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী তিনটি বোন অনেক অসহয় হয়ে পরেছে। মানুষের সাহায্য সহযোগীতায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিবন্ধী এই পরিবারটিকে সরকারী সহযোগীতার পাশাপাশি সমাজের বৃত্তবানদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান তিনি। 

ডাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম সিকদার জানান, আমার ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী এই পরিবারটিকে আমি নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছি। ওএমএস এর চাউলের একটা নাম দিয়েছি। সরকারী প্রদত্ত সহযোগীতা দেয়ার পাশাপাশি আমি ব্যাক্তিগত ভাবে তাদের পাশে থাকবো।

এ বিষয়ে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, আমি দেখলাম প্রতিবন্ধী পরিবারটি আসলেই অসহায়। প্রশাসন অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াবে। আমি শুনেছি তাদের একজন মাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। বাকি দুজনকে অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হবে। সাময়িক ভাবে পরিবারের জন্য যথা সম্ভব তাদের সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তারা যদি সেটা চালিয়ে নিতে পারে তাহলে আমরা সে ব্যবস্থাও করবো।